কী আছে ড. ইউনূসকে লেখা ট্রাম্পের সেই চিঠিতে?

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিযোগ্য সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই নতুন শুল্ক হার কার্যকর হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।

সোমবার (৭ জুলাই, ২০২৫) ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এই চিঠিটি প্রকাশ করেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, আরও ১৩টি দেশের সরকার প্রধানের কাছেও বাণিজ্য ঘাটতি সংক্রান্ত সতর্কবার্তা দিয়ে একই ধরনের চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।

এর আগে গত এপ্রিলে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই আগ্রাসী শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকরের আগে সময় দেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প তিন মাসের সময়সীমা দিয়েছিলেন। সেই সময় শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করে ১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টাকে পাঠানো চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বাংলাদেশের যেকোনো ও সব ধরনের পণ্যের ওপর আমরা মাত্র ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করব। ...অনুগ্রহ করে এটা অনুধাবন করুন যে, ৩৫ শতাংশ সংখ্যাটি আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্য ঘাটতি বৈষম্য রয়েছে, তা দূর করার জন্য যা প্রয়োজন তার থেকে অনেক কম।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য উৎপাদন করে, সেক্ষেত্রে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না।

প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা ট্রাম্পের চিঠির পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ

দি হোয়াইট হাউস
ওয়াশিংটন

জুলাই ৭, ২০২৫

মহামান্য
মুহাম্মদ ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
ঢাকা

প্রিয় জনাব ইউনূস,

আপনার কাছে এই চিঠিটি পাঠাতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। এই চিঠিটি আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের শক্তি ও প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে এবং এটি প্রমাণ করে যে, আপনার মহান দেশের সঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। তা সত্ত্বেও, আমরা আপনার সঙ্গে শুধুমাত্র আরও ভারসাম্যপূর্ণ এবং ন্যায্য বাণিজ্যের শর্তে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই, আমরা আপনাকে বিশ্বের এক নম্বর বাজার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসাধারণ অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাই। আমরা অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, বাংলাদেশের শুল্ক, অশুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য বাধার কারণে সৃষ্ট এই দীর্ঘস্থায়ী এবং নিয়মিত বাণিজ্য ঘাটতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের সম্পর্ক পারস্পরিক নয়।

আগামী ১ আগস্ট, ২০২৫ থেকে, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সমস্ত বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মাত্র ৩৫% শুল্ক আরোপ করব, যা সমস্ত খাতভিত্তিক শুল্কের বাইরে। উচ্চ শুল্ক এড়ানোর জন্য অন্য দেশ হয়ে আসা পণ্য সেই উচ্চ শুল্কের আওতাধীন হবে। অনুগ্রহ করে বুঝবেন যে, আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতির ব্যবধান দূর করার জন্য যা প্রয়োজন, এই ৩৫% তার চেয়ে অনেক কম। আপনি যেমন জানেন, যদি বাংলাদেশ বা আপনার দেশের কোনো সংস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে পণ্য তৈরি বা উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে কোনো শুল্ক থাকবে না এবং প্রকৃতপক্ষে, আমরা দ্রুত পেশাদারিত্বের সঙ্গে এবং নিয়মিতভাবে অনুমোদন দেওয়ার জন্য সবকিছু করব — অন্য কথায়, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।

যদি কোনো কারণে আপনি আপনার শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনি যে পরিমাণেই শুল্ক বাড়ান না কেন, তা আমাদের ধার্য করা ৩৫% এর সঙ্গে যোগ করা হবে। অনুগ্রহ করে বুঝবেন যে, এই শুল্কগুলো বাংলাদেশের বহু বছরের শুল্ক, অশুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য বাধাগুলো সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয়, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই অসহনীয় বাণিজ্য ঘাটতির কারণ। এই ঘাটতি আমাদের অর্থনীতি এবং প্রকৃতপক্ষে, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি!

আমরা আগামী বছরগুলোতে আপনার ট্রেডিং পার্টনার হিসেবে কাজ করার জন্য উন্মুখ। আপনি যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আপনার এখন পর্যন্ত বন্ধ থাকা বাণিজ্য বাজার খুলে দেন এবং আপনার শুল্ক, অশুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন, তবে আমরা সম্ভবত এই চিঠির শর্তাবলীতে একটি পরিবর্তনের কথা বিবেচনা করব। আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে এই শুল্ক বাড়ানো বা কমানো হতে পারে। আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে কখনও হতাশ হবেন না।

এই বিষয়ে আপনার মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ!

শুভেচ্ছান্তে, আমি,

(ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের স্বাক্ষর)

ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট