শুল্কের ‘হাতুড়ি’ হাতে ট্রাম্প, নিশানায় ব্রাজিল ও ভারতের বাণিজ্য!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক জোড়া সিদ্ধান্তে বিশ্ব বাণিজ্য মহলে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। হোয়াইট হাউস থেকে বুধবার তিনি একদিকে যেমন সমস্ত তামার আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা দিয়েছেন, তেমনই অন্যদিকে ব্রাজিলের মতো একটি দেশের সমস্ত পণ্যের ওপরও একই হারে শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১ আগস্ট থেকেই এই নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হতে চলেছে।

ব্রাজিলকে টার্গেট করার নেপথ্যে

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পেছনে বাণিজ্যিক কারণের চেয়ে রাজনৈতিক ক্ষোভই বেশি স্পষ্ট। তিনি সরাসরি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভাকে চিঠি দিয়ে এই পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, লুলা তার পূর্বসূরি জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছেন, যা আদতে একটি ‘উইচ হান্ট’। এছাড়াও লুলার বিরুদ্ধে বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার মতো গুরুতর অভিযোগও তুলেছেন তিনি।

সম্প্রতি ব্রিকস সম্মেলনে ট্রাম্পের শুল্কনীতির যে সমালোচনা করা হয়েছিল, এই পদক্ষেপকে তার জবাব হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। যদিও লুলা দ্য সিলভা জানিয়েছেন, আমেরিকা একতরফা শুল্ক আরোপ করলে ব্রাজিলও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ট্রাম্প ইতোমধ্যে আমেরিকার সঙ্গে ব্রাজিলের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন, যার রিপোর্টের ভিত্তিতে শুল্ক আরও বাড়তে পারে।

কেন গুরুত্বপূর্ণ তামা?

তামার ওপর শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে ট্রাম্প ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র বিষয়টি সামনে এনেছেন। বাণিজ্য সংক্রান্ত জাতীয় নিরাপত্তার ২৩২ নম্বর ধারা উল্লেখ করে তিনি জানান, বিমান, সেমিকন্ডাক্টর, ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি থেকে শুরু করে সামরিক সরঞ্জামের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে বিপুল পরিমাণ তামার প্রয়োজন। তার মতে, পূর্ববর্তী সরকার আমেরিকার তামা শিল্পকে ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং এখন সেই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার সময় এসেছে। এই ঘোষণার পাশাপাশি তিনি চিলে থেকে দ্রুত তামা আনার ব্যবস্থার কথাও বলেছেন।

ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ

ট্রাম্পের এই নীতি ভারতের জন্য দ্বিমুখী সংকট তৈরি করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত বিশ্বজুড়ে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের তামা ও তামাজাত পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে শুধু আমেরিকাতেই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৬০ মিলিয়ন ডলার। ফলে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে ভারতের এই বাণিজ্য বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

তবে সবচেয়ে বড় অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে ভারতের ওষুধ শিল্পের জন্য। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী দিনে ওষুধের ওপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হতে পারে। আমেরিকার বাজার ভারতের ওষুধ শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই বিপুল পরিমাণ শুল্ক সত্যিই আরোপ করা হয়, তবে তা ভারতের ওষুধ রপ্তানিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।