ফখরুল: নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ ইতিবাচক অগ্রগতি, ড. ইউনূস ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য

ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া নির্দেশকে ‘অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে দ্রুত সব প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি এই মঞ্চ থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি নির্বাচন কমিশনকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত সকল প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি একটি অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি। এজন্য তিনি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।’

নির্বাচন কমিশনের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন দ্রুত এই প্রস্তুতিগুলো সম্পন্ন করবে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযোগী একটি পরিবেশ তৈরি করবে। আমরা চাই, নির্বাচনটি যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। নির্বাচন কমিশন সেভাবেই কাজ করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’

বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, কিন্তু উভয়ের চেয়েই রাষ্ট্র বড়। আমরা উদার গণতন্ত্রে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়া উচিত এবং একটি নির্বাচিত সরকারেরই দেশ পরিচালনা করা এবং দেশের সমস্যা সমাধান করা উচিত।’

নির্বাচন নিয়ে নিজের আশাবাদী মনোভাবের কথা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি একজন আশাবাদী মানুষ। অনেকেই বলেন নির্বাচন হবে না। কিন্তু কেন হবে না? এই দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। মানুষ এর জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে, কারণ তারা সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব চায়।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমার মনে হয় না কোনো সমস্যা আছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে একটি নির্বাচিত সরকারের দিকে এগিয়ে যাওয়াই এখন মূল বিষয়। এটি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পথ।’

‘সংস্কার আমাদের রক্তে’

বিএনপির বিরুদ্ধে সংস্কারবিরোধী প্রচারণার অভিযোগ খণ্ডন করে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘সংস্কার আমাদের রক্তে, আমাদের জন্মই হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে। তাই আজ যদি কেউ বলে বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, আমি সেই বক্তব্যকে একটি চরম অন্যায় অভিযোগ হিসেবে বিবেচনা করব। তারা বলছে আমরা সংস্কার চাই না, তাই আমরা সংস্কারে বাধা দিচ্ছি। এর চেয়ে বড় সত্যের অপলাপ আর কিছু হতে পারে না।’

রপ্তানিতে মার্কিন শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ

বাংলাদেশের রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে কতটা মনোযোগ দিয়েছে, তা আমি নিশ্চিত নই। কিন্তু তাদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সত্যিই বিপদে আছি—দেশ ও জাতি গুরুতর বিপদে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রপ্তানির ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো তৈরি পোশাক। এই খাতে যদি ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসে, তবে এটি ভেঙে পড়বে। এর অর্থ হলো, আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা।’

তবে এ সংকট থেকে উত্তরণের পথ এখনো আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হয়তো এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ এখনো আছে। আমাদের শিল্পগুলো যেন টিকে থাকে, আমাদের নারীদের কর্মসংস্থান যেন নষ্ট না হয় এবং আমাদের অর্থনীতির যেন ক্ষতি না হয়—তাদের অবশ্যই এই বিষয়টি দেখতে হবে।’

সীমান্ত হত্যা ও পুশ-ইন

সীমান্তে হত্যা ও পুশ-ইনের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভারতের সঙ্গে জোরালোভাবে দর-কষাকষির মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আহ্বান জানাব। আমরা এ নিয়ে যথেষ্ট জোরালোভাবে কথা বলছি না।’

সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সকলকে অনুরোধ করছি, এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরুন। এটি কোনো মামুলি বিষয় নয়, এটি প্রতিদিন এবং সমস্ত সীমান্তজুড়ে ঘটছে। তাই আমাদের আরও জরুরি ভিত্তিতে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।’