সংবিধান: জুলাই ঘোষণাপত্রের বদলে মূল চেতনা যুক্ত করার প্রস্তাব বিএনপির

জুলাই ঘোষণাপত্রের পূর্ণাঙ্গ অন্তর্ভুক্তির বদলে এর মূল চেতনাকে সংবিধানে ঠাঁই দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির মতে, গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে অর্জিত জুলাইয়ের চেতনা এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতাকে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করাই হবে যৌক্তিক সমাধান।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এই প্রস্তাবের কথা জানান। তিনি বলেন, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে বিএনপি আন্তরিক, কিন্তু একটি সম্পূর্ণ ঘোষণাপত্র সংবিধানে যোগ করার ঐতিহ্যের সঙ্গে তারা একমত নন।

এই প্রস্তাবের পেছনের যুক্তি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধান কোনো সাহিত্য নয়।’ তিনি ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করেই প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭২ সালে যখন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, তখন সম্পূর্ণ ঘোষণাপত্রটি যুক্ত না করে এর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোই কেবল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।’

তার মতে, জুলাই ঘোষণাপত্রটি সম্পূর্ণ যোগ করা হলে ভবিষ্যতে নতুন বিতর্ক তৈরি হতে পারে। তখন প্রশ্ন উঠবে, কেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, ৭ নভেম্বরের জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস কিংবা ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের মতো ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো সংবিধানে যোগ করা হবে না।

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির আন্তরিকতার অভাব নেই

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির অনাগ্রহ রয়েছে—এমন অভিযোগও নাকচ করে দিয়েছেন সালাহউদ্দিন। তিনি দাবি করেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সরকারের দুজন উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানিয়ে একটি খসড়া পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু কয়েক মাসেও তার কোনো জবাব মেলেনি। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বিএনপি মাত্র একদিনের মধ্যেই প্রতিউত্তর দিয়ে নিজেদের আন্তরিকতার প্রমাণ দিয়েছে।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগে মতানৈক্য

একই বৈঠকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুই বিচারপতির মধ্য থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিতে পারবেন—এই প্রস্তাবে তারা একমত। তবে বৈঠকে উপস্থিত বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করায় বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই বৈঠকে বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।