আপনি পড়ছেন

বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় জড়ো হয়েছেন হাজারো মানুষ। হলোকাস্টের পর ইউরোপের একমাত্র গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃত এই নৃশংসতায় নিহত আট হাজারের বেশি বসনীয় মুসলমান পুরুষ ও কিশোরকে স্মরণ করতে দেশ-বিদেশ থেকে এসেছেন তারা। ঘটনার ৩০তম বার্ষিকীতে শোক আর বেদনায় ভারী হয়ে উঠেছে স্রেব্রেনিৎসার বাতাস।

স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যায় নিহত একজনের কফিন শুক্রবার কবরে নামানো হচ্ছে। ছবি: এপি

শুক্রবার স্রেব্রেনিৎসার কাছে একটি বিশাল সমাধিক্ষেত্রে সাতজন নতুন শনাক্ত হওয়া নিহত ব্যক্তির দেহাবশেষ সামষ্টিকভাবে দাফন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ বছর বয়সী দুজন তরুণও রয়েছেন। এই সমাধিক্ষেত্রে আগে থেকেই ছয় হাজারের বেশি নিহতের সমাধি রয়েছে। শহরটির আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা অগণিত গণকবর থেকে এখনও মরদেহ উদ্ধার হচ্ছে এবং প্রতি বছর বার্ষিকীতে তাদের এভাবেই সমাধিস্থ করা হয়।

তবে নিহতদের স্বজনেরা প্রায়শই তাদের প্রিয়জনের আংশিক দেহাবশেষই কেবল দাফন করার সুযোগ পান। কারণ কিলোমিটারের পর কিলোমিটার দূরে থাকা বিভিন্ন গণকবরে খণ্ডিত অবস্থায় তাদের দেহাবশেষ পাওয়া যায়। এমনই একজন মিরজেতা কারিচ, যিনি তার বাবার দেহাবশেষ দাফন করতে অপেক্ষা করছিলেন।

বাবার কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “ত্রিশ বছরের দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর আমরা একটি হাড় দাফন করছি।” ইসলামি রীতি অনুযায়ী কফিনটি সবুজ কাপড়ে মোড়ানো ছিল। তিনি আরও যোগ করেন, “আমার মনে হয়, যদি আমি তার পুরো দেহটা দাফন করতে পারতাম, তবে কিছুটা সহজ হতো। কী আর বলব, আমার পুরো পরিবার থেকে যে ৫০ জন নিহত হয়েছেন, আমার বাবা তাদেরই একজন।”

১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই, বলকান অঞ্চলের এই দেশটিতে জাতিগত সংঘাতের শেষ মাসগুলোতে বসনীয় সার্ব যোদ্ধারা পূর্বাঞ্চলীয় বসনীয় ছিটমহলটি দখল করার পর এই হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছিল। যুদ্ধের সময় জাতিসংঘের একটি সুরক্ষিত নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে ঘোষিত শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর, বসনীয় সার্ব যোদ্ধারা বসনীয় মুসলমান পুরুষ ও কিশোরদের তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে ফেলে এবং মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর স্রেব্রেনিৎসার আশেপাশের গণকবরে তাদের দেহ ফেলে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ লুকাতে বুলডোজার দিয়ে সেই গণকবরগুলো খুঁড়ে দেহাবশেষগুলো অন্যান্য সমাধিস্থলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১১ জুলাইকে স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে পালনের জন্য একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে।

এবারের স্মরণ অনুষ্ঠানে এবং শেষকৃত্যে বহু আন্তর্জাতিক কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা এবং ব্রিটেনের ডাচেস অব এডিনবরা, সোফি। সোফি বলেন, “যাদের এত মর্মান্তিকভাবে হারানো হয়েছে, তাদের সকলকে স্মরণ করা এবং এমন ঘটনা যেন আর কখনও না ঘটে তা নিশ্চিত করাই আমাদের কর্তব্য।”

ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাসপার ভেল্ডক্যাম্প বলেন, বসনীয় সার্বরা যখন স্রেব্রেনিৎসা দখল করে, তখন নেদারল্যান্ডসের জাতিসংঘ সেনারা সেখানে অবস্থান করছিল বলে তিনি “অপরাধবোধ” করছেন। তিনি বলেন, “আমি দেখছি স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার স্মরণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”

মাদার্স অব স্রেব্রেনিৎসা সংগঠনের প্রধান মুনিরা সুবাসিচ এক আবেগঘন বক্তৃতায় ইউরোপ ও বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ঘৃণা, অবিচার এবং হত্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সহায়তা করুন।”

স্রেব্রেনিৎসায় স্বামী, কনিষ্ঠ পুত্রসহ পরিবারের ২০ জনেরও বেশি সদস্যকে হারানো সুবাসিচ ইউরোপকে “জেগে ওঠার” আহ্বান জানান। চলমান সংঘাতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি যখন এখানে দাঁড়িয়ে আছি, তখন ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনের অনেক মা সেই একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন যা আমরা ১৯৯৫ সালে ভোগ করেছি। এটি একবিংশ শতক, কিন্তু ন্যায়বিচারের পরিবর্তে ফ্যাসিবাদ জেগে উঠেছে।”

বার্ষিকীর আগের দিন, বিভিন্ন গণকবর থেকে উদ্ধার হওয়া নিহতদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।

যুগোস্লাভিয়া থেকে দেশটির স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বসনীয় সার্বরা বিদ্রোহ শুরু করলে ১৯৯২ সালে বসনিয়ায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৫ সালে মার্কিন মধ্যস্থতায় একটি শান্তি চুক্তি হওয়ার আগে পর্যন্ত এই সংঘাতে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ নিহত এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

দুটি জাতিসংঘের আদালতের রায় সত্ত্বেও বসনীয় সার্ব এবং প্রতিবেশী সার্বিয়া উভয়ই স্রেব্রেনিৎসার হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকার করতে অস্বীকার করে। বসনীয় সার্বদের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা রাদোভান কারাদজিচ এবং রাতকো ম্লাদিচসহ আরও অনেককে গণহত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সার্বিয়ার রাষ্ট্রপতি আলেকসান্ডার ভুচিচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে শোক প্রকাশ করলেও স্রেব্রেনিৎসার হত্যাকাণ্ডকে একটি “ভয়াবহ অপরাধ” বলে অভিহিত করেছেন।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট কস্তা তার ভাষণে বলেন, “ইউরোপে বা অন্য কোথাও গণহত্যা অস্বীকার, ইতিহাস বিকৃতি বা এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের মহিমান্বিত করার কোনো স্থান নেই। এই ধরনের ভয়াবহতা অস্বীকার করা কেবল আমাদের ভবিষ্যৎকেই বিষাক্ত করে তোলে।”

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.