২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকার চাখারপুলে ছয় বিক্ষোভকারীকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং তার সাত অধস্তন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই অভিযোগ গঠন করে। বিচারপতি গোলাম মুর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. মুহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ট্রাইব্যুনাল হত্যা, নির্যাতন এবং অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে রাষ্ট্রপক্ষের вступительная বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আগামী ১০ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে ১১ আগস্ট থেকে।

উল্লেখ্য, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর এটি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত দ্বিতীয় প্রধান মামলা। এই মামলায় প্রথমে অভিযুক্ত থাকলেও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন পরে রাজসাক্ষী হন।

গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে বলপূর্বক নিখোঁজের ঘটনা সম্পর্কিত অন্তত ৪০টি মামলা বর্তমানে তদন্ত বা বিচারপূর্ব পর্যায়ে রয়েছে।

এদিকে, সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আরও দুটি মামলার শুনানি গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর একটি হলো ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছয় বিক্ষোভকারীকে হত্যা ও পুড়িয়ে মারার ঘটনা এবং অন্যটি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা।

চাখারপুল হত্যা মামলায় হাবিবুর রহমান ছাড়াও অভিযুক্ত বাকি সাত পুলিশ সদস্য হলেন—সাবেক ডিএমপি যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, সাবেক রমনা বিভাগের সহকারী উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) আরশাদ হোসেন এবং সাময়িক বরখাস্ত হওয়া তিন কনস্টেবল—সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ইমন ও নাসিরুল ইসলাম।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আসাদুজ্জামানের সরকারি বাসভবনে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পর হাবিবুর বেতার যোগাযোগের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ ইমরুল সেই বেতার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন। তারা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ২টার মধ্যে চাখারপুলে ছয় বিক্ষোভকারীকে হত্যার ঘটনায় সহায়তা, প্ররোচনা ও মদদ দিয়েছেন।

সোমবার অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক শাহবাগ থানার পরিদর্শক আরশাদ হোসেন এবং কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন, সুজন হোসেন ও নাসিরুল ইসলাম আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ তাদের প্রত্যেককে অভিযোগ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, “আপনারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে এবং বেতারবার্তায় পাওয়া আদেশে আপনাদের অধীনস্থদের মিছিলে থাকা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও তাজা গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেন। এর ফলে ছয়জন নিহত হন।”

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আরশাদ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। আমি সেদিন শাহবাগ এলাকায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে দায়িত্বে ছিলাম। এছাড়া, একজন পরিদর্শক হিসেবে আমার এ ধরনের আদেশ দেওয়ার কোনো ক্ষমতাই ছিল না।’

বাকি তিন অভিযুক্তও নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।

শুনানির শুরুতে প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের কাছে অভিযোগগুলো পুনরায় তুলে ধরেন। এর আগে গত ৩ জুলাই আটক আসামিদের পক্ষে এবিএম শিবলী সাদেকিন, সাদ্দাম হোসেন অভি এবং সিফাত মাহমুদ এবং পলাতক চার পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী কুতুবউদ্দিন আট আসামির অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে, এই ঘটনা রোম সংবিধি অনুসারে মানবতাবিরোধী অপরাধের আইনি সংজ্ঞার আওতায় পড়ে না, কারণ এটি বেসামরিক জনগণের ওপর ব্যাপক ও পরিকল্পিত হামলার অংশ ছিল না। তারা আরও বলেন, ১৯৭৩ সালের মূল আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর সদস্যদের অপরাধী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং সরকার শুধুমাত্র ২০২৪ সালের অক্টোবরে আইনটি সংশোধন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের এর আওতায় আনে, যা পূর্ববর্তী সময় থেকে কার্যকর করা হয়েছে।

গত ১ জুলাই তাজুল ইসলাম চাখারপুল হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের ওপর শুনানি শেষ করে আট পুলিশ সদস্যের বিচার শুরুর জন্য অভিযোগ গঠনের আবেদন করেন। এর আগে ২৪ মে রাষ্ট্রপক্ষ আট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের অপরাধীদের বিচারের জন্য নতুন এখতিয়ারে আনা এটিই প্রথম মামলা।

মামলায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ ৪৩ জনকে সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

তদন্তকারীদের মতে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একটি বড় সমাবেশে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে আসিফ ৫ আগস্ট চাখারপুলে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীদের ‘রাজাকারদের সন্তান ও নাতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আওয়ামী লীগের কর্মী ও তাদের সহযোগী সংগঠনের হামলা ঠেকাতে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। একইভাবে, ১৬ জুলাই রাজধানীজুড়ে ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সমন্বিত মিছিলের সময়ও কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। পরিবর্তে, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের কথিত নির্দেশে, অধস্তন কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের রক্ষা করার পরিবর্তে ইচ্ছাকৃতভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলা চালাতে সহায়তা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যমতে, দেশব্যাপী এই আন্দোলনে অন্তত ১,৪০০ জন নিহত এবং ২৫,০০০ জনেরও বেশি মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

৫ আগস্টের গুলিতে নিহতরা হলেন—মায়ের কাছে মর্মস্পর্শী চিঠি রেখে যাওয়া দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহাদী হাসান জুনায়েদ (মোস্তাকিন নামে পরিচিত), মোহাম্মদ ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মোহাম্মদ ইসমাইল হক এবং মানিক মিয়া (সাহারিক চৌধুরী নামেও পরিচিত)।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.