পতাকা অর্ধনমিত, মসজিদে দোয়া: শহীদদের স্মরণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ডাক

‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে আজ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।

জুলাই শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় দেশের সকল মসজিদে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

আজ জোহরের নামাজের পর সারাদেশের মসজিদগুলোতে ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজনের জন্য খতিব, ইমাম এবং মসজিদ কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ দুপুর দেড়টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জোহরের নামাজের পর বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল এক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে সৃষ্ট সুযোগকে কাজে লাগাতে সকলের প্রতি একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বৈরশাসনের শৃঙ্খল থেকে জাতিকে মুক্ত করতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদকে আমি এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।’ তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের ১৬ জুলাই ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য দিন।’

তিনি উল্লেখ করেন, এই দিনে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলি ও সন্ত্রাসী হামলায় চট্টগ্রাম, রংপুর এবং ঢাকায় অন্তত ছয়জন শহীদ হন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই নির্ভীক বীরদের আত্মত্যাগ আন্দোলনকে একটি শক্তিশালী প্রেরণা দিয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, দেশজুড়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও জনতা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে এবং আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। কোটাবিরোধী আন্দোলন শিগগিরই সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয় এবং সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের তীব্র আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। শত শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে মুক্তির এক নতুন সূর্যোদয় ঘটে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের জুলাইয়ের শহীদেরা ২০২৪ সালের স্বৈরশাসকবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে এক মহাকাব্যিক বীরত্বগাথা রচনা করেছেন।’

তিনি জানান, শহীদ ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের অবদানকে সমুন্নত রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর তাদের এবং তাদের পরিবারের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরিদপ্তর’ এবং ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, জুলাই শহীদদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করে গেজেট আকারে প্রকাশের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রতিটি শহীদ পরিবারকে ৩০ লক্ষ টাকা এবং মাসিক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণেও অনুরূপ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই শহীদরা বৈষম্য, দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্রমুক্ত একটি নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ‘তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্ট এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন বাংলাদেশের পথে আসুন আমরা সবাই দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাই—আজ এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’

অধ্যাপক ইউনূস জুলাই অভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।