গাজায় ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা যুক্তরাজ্যের, নতুন সহায়তার ঘোষণা

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি গাজায় ইসরায়েলের ত্রাণ ব্যবস্থাপনার তীব্র সমালোচনা করে এটিকে ‘অমানবিক’ ও ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। একইসঙ্গে তিনি ত্রাণপ্রার্থী গাজাবাসীকে হত্যার ঘটনায় ‘চরম নিন্দা’ জানিয়েছেন।

সোমবার যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে দেওয়া এক ভাষণে ডেভিড ল্যামি বলেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল তার ভয়াবহ আক্রমণ পুনরায় শুরু করার পর প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে সেখানে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের গাজার ৮৬ শতাংশ এলাকা থেকে বিতাড়িত করেছে এবং প্রায় ২০ লক্ষ মানুষকে ২০ বর্গমাইলের চেয়ে সামান্য বড় একটি এলাকায় আটকে রেখেছে। ল্যামি বলেন, ‘ইসরায়েলি সরকার যাই দাবি করুক না কেন, এত বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিককে বারবার বাস্তুচ্যুত করা তাদের সুরক্ষিত রাখছে না, বরং পরিস্থিতি ঠিক তার উল্টো।’

ল্যামি বলেন, ‘ইসরায়েলের নতুন ত্রাণ ব্যবস্থা অমানবিক, এটি বিপজ্জনক এবং এটি গাজাবাসীকে মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করছে। এই ব্যবস্থা মরিয়া বেসামরিক নাগরিকদের, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে, জীবনের অপরিহার্য সামগ্রীর জন্য অনিরাপদভাবে কাড়াকাড়ি করতে বাধ্য করছে।’

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই পরিস্থিতিকে একটি ‘বীভৎস দৃশ্য’ বলে আখ্যা দেন, যা ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ সৃষ্টি করছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, গত মে মাস থেকে ত্রাণ চাইতে গিয়ে প্রায় ১,০০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে শুধু গত সপ্তাহান্তেই ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলার জন্য অপেক্ষারত নারী ও শিশুদের ওপর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলা করেছে... আমি বেসামরিক নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে চাওয়ার মুহূর্তে তাদের হত্যার চরম নিন্দা জানাই।’

একটি জোরালো প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘মরিয়া ও ক্ষুধার্ত শিশুদের হত্যার পেছনে কী সামরিক যৌক্তিকতা থাকতে পারে?’

ডেভিড ল্যামি নিজেকে ‘ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও অস্তিত্বের অধিকারের একজন অবিচল সমর্থক’ হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করলেও তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে ইসরায়েলি সরকারের কর্মকাণ্ড বিশ্বে ইসরায়েলের ভাবমূর্তির অপূরণীয় ক্ষতি করছে এবং ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ণ করছে।’

গাজার সমগ্র জনসংখ্যাকে রাফাহতে ঠেলে দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিতর্কিত বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে ল্যামি বলেন, এটি একটি ‘নিষ্ঠুর পরিকল্পনা যা কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেওয়া উচিত নয়।’

তিনি যোগ করেন, ‘আমি এর দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানাই। স্থায়ীভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন।’

ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েল উভয়কেই অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, পরবর্তী যুদ্ধবিরতি ‘অবশ্যই শেষ যুদ্ধবিরতি হতে হবে।’

নতুন মানবিক সহায়তা

ভাষণকালে ল্যামি চলতি বছর গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য অতিরিক্ত ৪ কোটি পাউন্ড (প্রায় ৫ কোটি ৩৯ লক্ষ মার্কিন ডলার) বরাদ্দের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে রয়েছে ৭৫ লক্ষ পাউন্ড, যা সম্মুখসারির চিকিৎসা দাতব্য সংস্থা ‘ইউকে-মেড’কে তাদের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে এবং আরও জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর অপরিহার্য পরিষেবাগুলোর জন্য ২ কোটি পাউন্ড সহায়তা দেবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই তহবিল ২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জন্য জরুরি খাদ্য, আশ্রয় এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করবে, পাশাপাশি অঞ্চলজুড়ে ইউএনআরডব্লিউএ-এর বিস্তৃত কাজকে সমর্থন করবে।’

পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি

পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি সম্পর্কে ল্যামি বলেন, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যা ঘটছে তা হলো বসতি সম্প্রসারণের ‘নজিরবিহীন গতি’।

তিনি বলেন, ‘গাজার ভয়াবহতার পাশাপাশি, পশ্চিম তীরে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন প্রতিরোধে একটি ক্রমবর্ধমান অভিযান চলছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এটিকে সমর্থন করছেন, তার মন্ত্রীরা উৎসাহিত করছেন। এটি একটি চরমপন্থী মতাদর্শ দ্বারা চালিত, যা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে চায়—যা স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র পথ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এটি বসতি সম্প্রসারণের নজিরবিহীন গতিতে দেখতে পাচ্ছি। বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার ভয়াবহ মাত্রায়, এমনকি বসতি স্থাপনকারী সন্ত্রাসবাদেও দেখতে পাচ্ছি, কারণ সবচেয়ে জঘন্য মতাদর্শিক হামলাগুলো এমনই হয়।’

অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের ই১ এলাকায় নতুন আবাসন নির্মাণের ইসরায়েলি পরিকল্পনার বিষয়ে ল্যামি জোর দিয়ে বলেন, এই পরিকল্পনাগুলো ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’, ‘অবৈধ’ এবং ‘এটি অবশ্যই হতে দেওয়া যাবে না’।