জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে দেশ একটি ‘স্বল্প দক্ষ বা অনেকটাই অদক্ষ’ সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়েছে, যার ফলে ভালো অভিজ্ঞতার চেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতাই জুটেছে বেশি। এই সময়ে ফেসবুকের দিকে তাকিয়ে সরকার পরিচালনার মতো জনতুষ্টিবাদী সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে এবং ভিন্নমতের বিরুদ্ধে গণসহিংসতা বেড়েছে। সমাজজুড়ে সুনামির মতো ছড়িয়ে পড়েছে বিপজ্জনক দক্ষিণপন্থী মনোভাব।

আলতাফ পারভেজ

বুধবার দুপুরে ‘প্রথম আলো’ আয়োজিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ এসব কথা বলেন।

কর্মসংস্থান তৈরির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থান ঘটলেও গত এক বছরে কর্মসংস্থান বাড়েনি, বরং প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ কমেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগও চোখে পড়েনি। আলতাফ পারভেজের মতে, বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনায় এক ধরনের গোপনীয়তার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, যা উদ্বেগজনক।

তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রধানমন্ত্রীর দেবতাতুল্য ক্ষমতা কমিয়ে আনা। কিন্তু সেই ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কোনো উদ্যোগ নেই। কেন্দ্রীয় ক্ষমতা কমাতে হলে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা জরুরি, অথচ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি কোনো আলোচনাতেই আসছে না।’

সংস্কার কার্যক্রমের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই গবেষক। তিনি জানান, ১১টি সংস্কার কমিশন ও টাস্কফোর্স গঠিত হলেও মাত্র ছয়টি কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। বাকি পাঁচটি কমিশন ও তাদের সদস্যদের কেন অন্তর্ভুক্ত করা হলো না, তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আলতাফ পারভেজের পর্যবেক্ষণে, গত এক বছরে অভ্যুত্থানের মূল ঐক্য নষ্ট হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব একজন ব্যক্তিকে দিয়ে বাকিদের অবদানকে খাটো করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শেষ সময়েও নাগরিক সমাজের যে স্বাধীন কণ্ঠস্বরগুলো টিকে ছিল, তাদের অনেককে সরকারি পদ-পদবি দিয়ে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয়েছে। ফলে নাগরিক সমাজ দুর্বল হয়ে পড়েছে।’

এ ছাড়া অভ্যুত্থানের কেন্দ্র থেকে নারীদের সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘রীতিমতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করে নারীদের বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তা উচ্চারণ করার মতো নয়। এটা গত এক বছরের একটি দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা।’

তবে কিছু ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেন তিনি। তার মতে, ‘তরুণ–তরুণীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি রাজনীতিমনস্ক হয়েছে এবং তাদের মধ্য থেকে দ্বিদলীয় বৃত্তের বাইরে নতুন রাজনৈতিক ধারা তৈরি হচ্ছে। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৫০ বছর পর রাজনীতির মূল আলোচনায় এসেছে।’ এ ছাড়া বড় প্রকল্পে লুটপাট কমা, ব্যাংক খাতের কিছুটা সুরক্ষা এবং ভূরাজনীতিতে একপেশে নীতি থেকে সরে আসার বিষয়গুলোকে তিনি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন।

ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘আমরা ২০২৪ সালে যে ধরনের রাষ্ট্র ফেলে এসেছিলাম, মনে হচ্ছে সেই একই ধরনের রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা আবার ফিরে আসতে চলেছে।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, জুলাই সনদ যদি মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়, তবে অনেকেই তা মানবে না এবং আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে না। এর ফলে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, ‘ন্যূনতম একটা নির্বাচন যেন হয়, সবাই যেন অংশ নিতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরিতে জোর দেওয়া উচিত। বড়গুলো চাইতে এখন আর সাহস হচ্ছে না।’

আগামী সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকা এবং ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করে ডানপন্থী শক্তির উত্থানকেও ভবিষ্যতের জন্য বড় বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি। তার মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে বিশ্বে যে সংরক্ষণবাদী জাতীয়তাবাদী অর্থনীতির উত্থান ঘটছে, তাতে বাংলাদেশও বিপদে পড়তে পারে।

তবে সবকিছুর পরেও একটি বিষয়ে আশাবাদী আলতাফ পারভেজ। তিনি বলেন, ‘আগামীতে যদি আবারও কোনো স্বৈরাচার জেঁকে বসতে চায়, তবে তারা প্রবল প্রতিবাদের মুখে পড়বে। বাংলাদেশের তরুণদের মনোজগতে পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন কোনো এজেন্সি, বাহিনী বা গোলাগুলিকে আর ভয় করে না।’

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে শুরুতে উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তে হতাহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, হোসেন জিল্লুর রহমান, আনু মুহাম্মদ, সারা হোসেন, সাঈদ ফেরদৌস, কামার আহমাদ সাইমন, জাহেদ উর রহমান, মাহা মীর্জা এবং সহুল আহমদসহ অনেকে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.