গাজায় ‘সত্যিকারের কোনো ক্ষুধা নেই’, ইসরায়েলি মন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ নিয়ে যখন কয়েক ডজন দেশ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা ক্রমাগত সতর্কবার্তা দিয়ে চলেছে, ঠিক তখনই ইসরায়েলের কট্টর-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির দাবি করেছেন যে সেখানে ‘সত্যিকারের কোনো ক্ষুধা নেই’। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই বিতর্কিত মন্তব্য করেন।

বেন-গভির তার পোস্টে লিখেছেন, ‘গাজায় সত্যিকারের কোনো ক্ষুধা নেই। যদি তারা ক্ষুধার্ত থাকত, তবে তারা জিম্মিদের বাড়ি ফিরিয়ে দিত’। তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি গাজায় হামাসকে ক্ষুধায় রাখার নীতি সমর্থন করি’।

উগ্র-জাতীয়তাবাদী ‘জিউইশ পাওয়ার’ দলের নেতা বেন-গভির দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় সমস্ত মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে কথা বলে আসছেন। তিনি এই ভূখণ্ড পুনরায় পুরোপুরি দখল, এর ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের বহিষ্কার এবং সেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের একজন কট্টর সমর্থক।

তার এই সর্বশেষ মন্তব্যটি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার নীতিকে সমর্থন করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। নেতানিয়াহুর এই নীতিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজাবাসীর বিরুদ্ধে ‘সম্মিলিত শাস্তি’ হিসেবে ব্যাপকভাবে নিন্দা করেছে।

বেন-গভিরের এই বক্তব্য জাতিসংঘসহ অসংখ্য দেশের সরকার এবং মানবিক সংস্থার অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। এসব সংস্থা গাজায় ব্যাপক অনাহার ও দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইসরায়েল তার গণহত্যা অভিযানের অংশ হিসেবে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

গাজা উপত্যকা বর্তমানে তার ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল এই উপত্যকায় এক বিধ্বংসী যুদ্ধ শুরু করেছে এবং গত ২ মার্চ থেকে সমস্ত প্রবেশ-পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং মানবিক সহায়তার প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

এই অবরোধের কারণে বিশেষ করে শিশু ও অসুস্থদের মধ্যে মারাত্মক অপুষ্টি দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে এবং সহায়তা সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে যে অনাহারে গণমৃত্যু রোধ করার জন্য সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলি বাহিনী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় এক নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে এ পর্যন্ত ৫৯,৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এই নিরলস বোমাবর্ষণে উপত্যকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং খাদ্য সংকট ও রোগের বিস্তার ঘটেছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এছাড়া, এই উপত্যকায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) একটি গণহত্যা মামলার মুখোমুখি হয়েছে।