২০২৪ সালের ২৬ জুলাই: দিনভর অভিযান, ৩ সমন্বয়ককে হাসপাতাল থেকে তুলে নেয় ডিবি
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ২৬ জুলাই ২০২৪, ছিল এক বিভীষিকাময় দিন। সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকায়ও ওইদিন চালানো হয় ‘ব্লক রেইড়’ নামক বিশেষ অভিযান, যেটি আতঙ্ক ছড়ায় হাজারো পরিবারে। একই দিনে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নেওয়া হয় আন্দোলনের তিন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে।

ব্লক রেইড: রাতভর অভিযান, গুলি, সার্চলাইট ও আতঙ্ক
২৬ জুলাই ভোররাত থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চালানো হয় নজিরবিহীন ‘ব্লক রেইড’। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বসুন্ধরা, মাতুয়াইল, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে বাসা-বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। কিছু এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেওয়া হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় সড়কবাতি।
তল্লাশির সময় শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন চেক করা হয়, ছবি-ভিডিও থাকলে গ্রেপ্তার করা হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। কেউ কেউ জানান, অভিযুক্ত না পেলে পরিবারের সদস্যদেরও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কেউ একজন ভবনের উপর থেকে ভিডিও করছিলেন, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে।
শাহীনবাগ, বসুন্ধরা, মিরপুর ১২ ডিওএইচএস, মহাখালীসহ একাধিক এলাকায় অভিযান চালানোর সময় হেলিকপ্টার থেকে সার্চলাইট ফেলা হয় বলেও জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকে রাতেই এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।
সমন্বয়কদের হাসপাতালে থেকেও নিরাপদ রাখা গেল না
কোটা আন্দোলনের তিন কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার চিকিৎসাধীন ছিলেন রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সাদা পোশাকে একদল ব্যক্তি এসে নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রথমে নাহিদ, পরে আসিফ ও বাকেরকে তুলে নিয়ে যায়।
পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডিবি পুলিশের তৎকালীন প্রধান হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, “নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সহিংসতার বিষয়ে তাদের কাছে তথ্য থাকতে পারে।”
এর আগে ১৯ জুলাই মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া থেকে নাহিদকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। পরে ২১ জুলাই পূর্বাচলে তাকে আহত অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়। একইভাবে আসিফ ও বাকেরকে তুলে নেওয়ার পর ২৪ জুলাই শহরের বিভিন্ন স্থানে রেখে যাওয়া হয়। এরপর থেকেই তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সারা দেশে গ্রেপ্তার, মামলা, আতঙ্ক
এদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ব্লক রেইড’ ও অভিযান চলতে থাকে সারা দেশে। পুলিশের তথ্যমতে, ১৭ থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে গ্রেপ্তার হন মোট ৬ হাজার ২৬৪ জন। শুধু ২৬ জুলাই একদিনেই গ্রেপ্তার হয় ৭৬৫ জন, এর মধ্যে ২০৭ জনই রাজধানী থেকে। ঢাকায় এ পর্যন্ত দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২০৯টি। চট্টগ্রাম থেকেও অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তারের খবর আসে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সরকারের বক্তব্য
সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ, কানাডা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও অর্থনীতি সমিতিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন। তারা সকলেই নিরপেক্ষ তদন্ত, আটক-গ্রেপ্তার বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে বলেন, “দলমত নির্বিশেষে সকল আহতের চিকিৎসা ও আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার।”
একই দিনে বিটিভি ভবনে নাশকতার স্থান পরিদর্শনও করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “নিহতদের কেউই আন্দোলনকারী ছিলেন না, তারা নিরীহ মানুষ। সহিংসতার জন্য বিএনপি-জামায়াত দায়ী।”
প্রবাসী কণ্ঠও উঠেছে
২৬ জুলাই লন্ডনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন লেবার পার্টির এমপি ড. রুপা হক। তিনি জানতে চান, “বাংলাদেশে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য সরকারের অবস্থান কী?”
একই দিনে আরও প্রাণহানি
এদিন সহিংসতায় আহত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর আসে। এ নিয়ে আন্দোলন চলাকালে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়ে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.