সুদানে আরএসএফের সমান্তরাল সরকার ঘোষণা, বিভক্তি আরও গভীরের আশঙ্কা

ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ তৃতীয় বছরে প্রবেশের প্রাক্কালে সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) সমর্থিত একটি জোট দেশটিতে সমান্তরাল সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজধানী খার্তুমে সেনা-নিয়ন্ত্রিত কর্তৃপক্ষকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানো হলো, যা দেশটির চলমান সংকটকে আরও ঘনীভূত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।

আরএসএফ-সমর্থিত এই জোটটি নিজেদের ‘দ্য লিডারশিপ কাউন্সিল অব দ্য সুদান ফাউন্ডিং অ্যালায়েন্স (টিএএসআইএস)’ নামে পরিচয় দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান ‘হেমেদতি’ দাগালো ১৫ সদস্যের একটি সভাপতি পরিষদের নেতৃত্ব দেবেন, যেখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শাসকেরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। সুদানের রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ হাসান ওসমান আল-তায়িশিকে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

টিএএসআইএস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই ঐতিহাসিক অর্জনের মুহূর্তে আমরা সুদানের জনগণকে অভিনন্দন জানাই, যারা দশকের পর দশক ধরে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের শিকার হয়েছেন। আমরা স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সমতার ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও বিকেন্দ্রীভূত সুদান গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

বিশ্লেষকদের মতে, এই স্বঘোষিত সরকার সুদানের বিভাজনকে আরও গভীর করতে পারে এবং বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সংঘাত উসকে দিতে পারে।

সুদানের সেনাবাহিনী গত মে মাসে খার্তুম থেকে আরএসএফকে পুরোপুরি বিতাড়িত করার দাবি করলেও যুদ্ধ এখনো থামেনি। বিশেষ করে দারফুর অঞ্চলে সম্প্রতি সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। সেখানে আরএসএফ এল-ফাশির শহর অবরোধ করে রাখায় দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং প্রায় এক কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো আরএসএফ এবং সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) উভয়কেই নৃশংসতার জন্য অভিযুক্ত করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আরএসএফ যোদ্ধারা নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর যৌন সহিংসতা চালিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে বাস্তুচ্যুত করছে। এছাড়া, বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও মানবিক সহায়তায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র হেমেদতির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে দীর্ঘদিনের শাসক ওমর আল-বশিরের পতনের পর থেকেই সুদানে অস্থিতিশীলতা চলছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও হেমেদতি যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদকের নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। একসময় তারা ক্ষমতা ভাগাভাগি করলেও ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে রাষ্ট্র ও সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেদের মধ্যেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে কোনো আদর্শগত বিরোধ না থাকলেও ক্ষমতা ও সম্পদের দখলকে কেন্দ্র করেই এই সংকট তৈরি হয়েছে, যা নিরসনে বহু আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।