ইসরায়েলকে বাঁচাতে গিয়ে ফুরিয়ে আসছে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার!

ইরানকে মোকাবিলায় ইসরায়েলকে সহায়তা করতে গিয়ে সংকটে পড়েছে খোদ যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে নিজেদের ভান্ডার প্রায় শূন্য করে ফেলেছে দেশটি। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুনে ১২ দিনের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়ের পরিমাণ এতটাই বেশি ছিল যে, নতুন কোনো বড় ধরনের সামরিক সংঘাতে দ্রুত সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে দেশটি।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের চালানো নজিরবিহীন হামলা ঠেকাতে মার্কিন বাহিনীকে তাদের বৈশ্বিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (থাড) প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মোতায়েন করতে হয়েছিল। ব্যাপক প্রতিরোধ সত্ত্বেও বহু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সেই প্রতিরক্ষা বলয় ভেদ করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়।

একটি সূত্র জানিয়েছে, ১২ দিনের ওই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ১৫০টিরও বেশি থাড ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করে, যা পেন্টাগনের মোট মজুদের এক-চতুর্থাংশ। এই বিপুল পরিমাণ ইন্টারসেপ্টর পুনরায় তৈরি করতে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হবে এবং সময় লাগবে এক বছরেরও বেশি।

শুধু আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই নয়, ইরানের হামলা মোকাবিলায় মার্কিন নৌবাহিনীকেও বিপুল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে হয়েছে। মার্কিন নৌবাহিনীর রণতরীগুলো প্রায় ৮০টি স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৩ ইন্টারসেপ্টর নিক্ষেপ করে, যার প্রতিটির মূল্য ৮ থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলার। যুদ্ধের মাঝখানে সাগরে অবস্থানরত জাহাজে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ভরার সুযোগ না থাকায় ডেস্ট্রয়ারগুলোকে ঘাঁটি পরিবর্তন করতে হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েলের অবস্থাও আশাব্যঞ্জক নয়। দেশটির নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—অ্যারো, ডেভিডস স্লিং এবং আয়রন ডোম সিস্টেমের ইন্টারসেপ্টরের মজুদও দ্রুত ফুরিয়ে এসেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, ইরান যদি আরও কয়েকটি বড় আকারের হামলা চালাত, তবে ইসরায়েলের অ্যারো-৩ ইন্টারসেপ্টরের ভান্ডার পুরোপুরি শেষ হয়ে যেত। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের জন্য বরাদ্দকৃত ইন্টারসেপ্টর ইসরায়েলে পাঠানোর কথাও বিবেচনা করেছিল।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ টম কারাকো এই পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা আরেকটি এমন সংঘাত সামাল দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। সবচেয়ে বড় ভয় হলো—ইরান আবার এমন কিছু করতে পারে। কিন্তু সেটি হলে আমাদের পক্ষে আর তা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না।’