গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করল ইসরায়েলি নৌবাহিনী

গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ত্রাণবাহী জাহাজ ‘হান্দালা’কে আটক করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। গন্তব্য থেকে মাত্র ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় জাহাজটিকে থামিয়ে দেওয়া হয়। জাহাজটিতে থাকা ২১ জন যাত্রীর মধ্যে মানবাধিকারকর্মী, চিকিৎসাকর্মী, সাংবাদিক এবং ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ সদস্যরা ছিলেন।

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) একজন মুখপাত্র বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের সব ক্যামেরা নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে এবং আমাদের সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’

ঘটনার একটি সরাসরি সম্প্রচারে দেখা যায়, সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনারা জাহাজে উঠে আসছেন। এ সময় জাহাজের ডেকে থাকা কর্মীরা লাইফ জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় হাত তুলে আত্মসমর্পণ করছিলেন। এর পরপরই হেলমেট পরা এক সেনা ক্যামেরাটি ঘুরিয়ে দিলে সম্প্রচারটি বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ইসরায়েলি নৌবাহিনী ‘নাভার্ন’ (হান্দালার পূর্বনাম) নামের জাহাজটিকে গাজার উপকূলীয় এলাকায় অবৈধ প্রবেশের আগেই থামিয়ে দিয়েছে। জাহাজটি নিরাপদে ইসরায়েলের তীরে আনা হচ্ছে এবং সব যাত্রী নিরাপদ আছেন।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অবৈধভাবে অবরোধ ভাঙার প্রচেষ্টা বিপজ্জনক, বেআইনি এবং চলমান মানবিক প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে।’

এফএফসি জানিয়েছে, জাহাজে ফ্রান্স ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দুইজন সদস্য, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মী ক্রিশ্চিয়ান স্মল এবং অস্ট্রেলিয়ান স্বেচ্ছাসেবী তানিয়া সাফিসহ বিভিন্ন দেশের ১৯ জন কর্মী ও দুইজন সাংবাদিক ছিলেন। নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তাদের একজন নাগরিকের জাহাজে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

জাহাজটি আটকের কয়েক ঘণ্টা আগে এফএফসি জানিয়েছিল, তারা ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়া এড়াতে মিশরের দিকে যাত্রাপথ পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। অস্ট্রেলিয়ান স্বেচ্ছাসেবী তানিয়া সাফি এক বার্তায় বলেছিলেন, ‘ইসরায়েল এখন যদি আমাদের আটক করে, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইনের লঙ্ঘন হবে।’

আটক হওয়া জাহাজটিতে শিশুদের জন্য খাদ্য, ডায়াপার, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি সহায়তা সামগ্রী ছিল। এফএফসি অভিযোগ করে বলেছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী নিরস্ত্র জাহাজটি আটক করে যাত্রীদের জোরপূর্বক নিয়ে গেছে এবং ত্রাণসামগ্রী জব্দ করেছে।’

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযানকে একটি ‘প্রচারণামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যা দিলেও মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত মাসে এই ফ্লোটিলার ‘মাদলিন’ নামের আরেকটি জাহাজ একইভাবে ইসরায়েলি বাহিনীর বাধার মুখে পড়েছিল। ওই জাহাজে অন্যদের সঙ্গে বিশ্বখ্যাত জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও ছিলেন। সে সময় জাহাজটিকে আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাত্রীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।