‘যুদ্ধ না থামালে বাণিজ্য চুক্তি নয়’, ট্রাম্পের হুমকিতে আলোচনায় থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া

ফের একবার যুদ্ধ থামাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তার শুল্ক আরোপের হুমকির মুখে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানে সোমবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বৈঠকে বসতে চলেছেন দেশ দুটির শীর্ষ নেতারা। রোববার (২৭ জুলাই) ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

চলতি বছরের শুরুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সীমান্ত সংঘাত থামাতেও বাণিজ্য ব্যবস্থাকে কাজে লাগানোর কৃতিত্ব দাবি করেছিলেন ট্রাম্প। এবারও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একই ধরনের চাপ প্রয়োগ করলেন তিনি। রোববারও দুই দেশের ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে ভারী গোলাবর্ষণ অব্যাহত ছিল। রকেট ও কামান হামলার জন্য উভয় পক্ষই একে অপরকে দায়ী করেছে। কম্বোডিয়ার সামরিক অবস্থানে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে।

থাই সরকারের মুখপাত্র জিরাইউ হৌংসুবের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার বিকেলে থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই এবং কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেট বৈঠকে মিলিত হবেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সভাপতি হিসেবে আনোয়ার ইব্রাহিম এই সংলাপের আয়োজন করছেন।

গত ২৪ জুলাই দুই দেশের মধ্যে এই সীমান্ত সংঘাত শুরু হয়। এরপর শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথকভাবে ফোনে কথা বলেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে ওয়াশিংটন কোনো দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য চুক্তি করবে না।

ট্রাম্পের এই হুমকির পরই রোববার থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার হয় এবং অবশেষে দুই পক্ষকে আলোচনায় রাজি করান আনোয়ার ইব্রাহিম। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেন এবং অবিলম্বে উত্তেজনা কমাতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

রোববার ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেয়েনের সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের কাছে দুই নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলার বিষয়টি স্বীকার করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমি উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে জানিয়েছি, যুদ্ধের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো বাণিজ্য চুক্তি করব না। সেখানে অনেক মানুষ মারা গেছে। আমার মনে হয়, তারা এখনই বিষয়টি মীমাংসা করতে চায়’।

পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর শান্তি ফিরে এলে আমি উভয় দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি!’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে থাইল্যান্ডের ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। ফলে দেশটি ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি এড়িয়ে চলতে চাইছে। থাই কর্মকর্তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত ৩৬ শতাংশ শুল্ক কমানোর জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ব্যাংককের থাম্মাসাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক ফুয়াদ পিতসুয়ান মনে করেন, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প এই পরিস্থিতিকে নিজের বিজয় হিসেবেই তুলে ধরবেন।

সূত্র: ব্লুমবার্গ