কঙ্গোর গির্জায় সশস্ত্র হামলা, নিহত অন্তত ৩৮

গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পূর্বাঞ্চলে একটি গির্জায় সশস্ত্র হামলায় অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। স্থানীয় সময় রোববার ভোরে ইতুরি প্রদেশের কোমান্ডা শহরের একটি ক্যাথলিক গির্জায় এই নৃশংস হামলা চালানো হয়। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অ্যালাইড ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসের (এডিএফ) সদস্যরা এই হামলা চালিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

স্থানীয় একজন মানবাধিকার কর্মীর বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্ত ব্যক্তিরা গির্জায় রাত্রি জাগরণ প্রার্থনায় অংশ নিয়েছিলেন। হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করে তাদের হত্যা করে। হামলার পর গির্জার পাশের কয়েকটি বাড়ি ও দোকানেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। গির্জাটি কারিতাস নামের একটি দাতব্য সংস্থা পরিচালনা করত বলে জানা গেছে।

তবে স্থানীয় রেডিও ওকাপির দাবি, হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গির্জার ভেতরেই ২০ জনের বেশি মানুষকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। বাকিদের মরদেহ আশপাশের পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

কঙ্গোর সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জুলস এনগঙ্গো হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও এমন ভয়াবহ হামলার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় নাগরিক সমাজের নেতা দিউদোনে দুরানথাবো বলেন, ‘নিহতদের মধ্যে অন্তত তিনজনের দেহ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। আরও মরদেহের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আমরা অত্যন্ত হতাশ ও আতঙ্কিত। একটি শহরে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকার পরও কীভাবে এমন হত্যাযজ্ঞ চলতে পারে, তা মেনে নেওয়া যায় না। হামলাকারীরা এখনো আশপাশেই লুকিয়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে সামরিক হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।’

জাতিসংঘের কঙ্গো মিশন ইতুরিতে সহিংসতার এই নতুন ঢেউয়ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। গত সপ্তাহেই প্রদেশটির বিভিন্ন স্থানে এডিএফের হামলায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছিলেন। জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র সে সময় ওই ঘটনাকে ‘রক্তস্নান’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ধারাবাহিক সহিংসতার কারণে আক্রান্ত এলাকার বহু মানুষ নিরাপত্তার জন্য বুনিয়া শহরে পালিয়ে গেছেন।

উল্লেখ্য, এডিএফ নব্বইয়ের দশকে উগান্ডায় একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরে উগান্ডার সেনাবাহিনীর চাপে তারা কঙ্গোতে ঘাঁটি গাড়ে। ২০১৯ সালে গোষ্ঠীটি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। বিগত দুই দশকে কঙ্গো ও উগান্ডা সীমান্তে তাদের হামলায় হাজারো বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। পূর্ব আফ্রিকায় একটি চরমপন্থী শাসনব্যবব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই তাদের লক্ষ্য বলে গোষ্ঠীটি দাবি করে থাকে।