গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত, একদিনে নিহত আরও অর্ধশত ফিলিস্তিনি

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলা অব্যাহত রয়েছে। সোমবার নতুন করে চালানো হামলায় আরও অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। সেখানকার চিকিৎসা সূত্রগুলো এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মধ্য গাজার আল-আদওয়া হাসপাতাল জানিয়েছে, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে বেসামরিক নাগরিকদের একটি জমায়েতকে লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি হামলায় সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ২২ জন আহত হয়েছেন।

গাজা শহরের উত্তরাঞ্চলে আল-সাফতাউয়ি এলাকার কাছে বাস্তুচ্যুত পরিবারদের আশ্রয় দেওয়া একটি কলেজে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান আঘাত হানলে আরও দুজন ফিলিস্তিনি নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন বলে চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন।

চিকিৎসা সূত্রগুলো আরও জানায়, সোমবার ভোরে দক্ষিণ ও মধ্য গাজার বিভিন্ন বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। এ ঘটনায় আরও অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহতে একটি পরিবারের বাড়ি লক্ষ্য করে চালানো বিমান হামলায় একজন নারী নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

একইভাবে, গাজা শহরের পূর্বাঞ্চলে আল-দারাজ মহল্লায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও অনেকে আহত হন।

দক্ষিণ গাজা ভূখণ্ডের খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও পাঁচজন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান।

খান ইউনিস শহরের পশ্চিমে ‘জাপানি’ হিসেবে পরিচিত মহল্লায় একটি তিনতলা বাড়িকে লক্ষ্য করে চালানো আরেকটি বিমান হামলায় ১০ জন নিহত এবং ৩০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

পৃথক আরেকটি হামলায়, মধ্য গাজার আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল গত ১৮ বছর ধরে গাজার ওপর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে এবং গত ২ মার্চ থেকে ভূখণ্ডটির সমস্ত পারাপার পথ বন্ধ করে দিয়েছে, যা সেখানকার মানবিক পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক সকল আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় এক নিষ্ঠুর সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে। এই অভিযানে প্রায় ৬০,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। নিরলস বোমাবর্ষণে সমগ্র ভূখণ্ডটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এছাড়া, গাজায় চালানো এই যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার সম্মুখীন।