জাতিসংঘে স্পেন: দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাধাগ্রস্ত হলে জবাবদিহিতা চাইতে হবে

সোমবার জাতিসংঘে ফিলিস্তিন বিষয়ক এক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, একতরফা পদক্ষেপ, বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা এবং বাধ্যতামূলক বাস্তুচ্যুতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এগুলো দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করে। তিনি এ ধরনের সব কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দেওয়া ভাষণে আলবারেস বলেন, ‘আমরা এমন একতরফা সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারি না যা এই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করে। আমরা বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা মেনে নিতে পারি না, আমরা ধারাবাহিক বাধ্যতামূলক বাস্তুচ্যুতিও মেনে নিতে পারি না।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের নিজেদের তৈরি করা আইনি কাঠামোর কোনো লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে, যা ইসরায়েলসহ আমাদের সকলকে মানতে বাধ্য করে, সেক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই স্পষ্টভাবে জবাবদিহিতা দাবি করতে হবে।’

আলবারেস উল্লেখ করেন যে, বিশ্ব বর্তমানে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ‘সবচেয়ে ভয়াবহ’ পর্ব প্রত্যক্ষ করছে, যা জাতিসংঘের আলোচ্যসূচিতে থাকা প্রাচীনতম অমীমাংসিত সমস্যা। তিনি প্রতিনিধিদের মনে করিয়ে দেন যে, জাতিসংঘের প্রথম শান্তি মিশন ফিলিস্তিনেই পাঠানো হয়েছিল, অথচ সেই অঞ্চল এখন ‘সর্বকালের সবচেয়ে গুরুতর পরিস্থিতির’ সম্মুখীন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় ৬০,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে ‘শান্তির পথে একমাত্র সম্ভাব্য উপায়’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান—যা ইতোমধ্যে জাতিসংঘের ১৪৯টি সদস্য রাষ্ট্র স্বীকার করেছে—এবং জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্য হিসেবে ফিলিস্তিনের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন।

স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষই গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা গ্রহণের ‘একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি’। তিনি একটি টেকসই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রূপরেখা তুলে ধরে বলেন, ‘গাজা ও পশ্চিম তীরকে একটি একক ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে আনতে হবে এবং ভূখণ্ডগত ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। উভয় অঞ্চলকে একটি স্থল করিডোরের মাধ্যমে সংযুক্ত করতে হবে, যেখানে গাজায় একটি সমুদ্রবন্দর এবং পূর্ব জেরুজালেমে রাজধানী থাকবে।’

গাজায় মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করায় আলবারেস জাতিসংঘ এবং বিশেষ করে ইউএনআরডব্লিউএ-এর নেতৃত্বে ‘নির্বিঘ্নে বিপুল পরিমাণে’ ত্রাণসামগ্রী पोहोचানোর দাবি জানান।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের ২০২৪ সালের পরামর্শমূলক মতামতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।’

জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার আগে আলবারেস ঘোষণা করেন যে, স্পেন ‘ন্যায়বিচার ও মানবতার স্বার্থে’ গাজায় আকাশ থেকে ১২ টন খাদ্য সহায়তা ফেলবে, যা প্রায় ৫,৫০০ জনের খাবারের সমান। এই অভিযানে ২৪টি প্যারাশুট ব্যবহার করা হবে, যার প্রতিটি ৫০০ কিলোগ্রাম (১,১০২ পাউন্ড) ওজন বহনে সক্ষম।