জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের জোরালো আহ্বান: দখলদারিত্বের অবসান ও রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিন

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি প্রদান এবং ইসরায়েলের কয়েক দশকব্যাপী দখলদারিত্ব অবসানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বিষয়ক এক উচ্চ-পর্যায়ের সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ফ্রান্সের পরিকল্পিত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং অন্যান্য দেশকেও অবিলম্বে এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আমি সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ফ্রান্স এবং প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঐতিহাসিক ও সাহসী সিদ্ধান্তকে অভিবাদন জানাই। যারা এখনো স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের প্রতি আমি অবিলম্বে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ নিশ্চিত করেন যে, প্যারিস আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৯টি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

মুস্তাফা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ‘যুদ্ধ অবসানের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানান। এর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবিলম্বে অবসান। তিনি একটি সার্বভৌম সরকারের অধীনে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডগুলোকে একীভূত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই পূর্ব জেরুজালেমসহ গাজা ও পশ্চিম তীরকে একীভূত করতে হবে, যেখানে কোনো দখলদারিত্ব, অবরোধ, বসতি স্থাপন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি বা ভূখণ্ড দখল থাকবে না।’

মুস্তাফা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সম্মিলিত শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, কোনো বিলম্ব বা দ্বিধা ছাড়াই কাজটি করুন।’

যুদ্ধ-পরবর্তী স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘হামাসকে অবশ্যই গাজায় তাদের শাসনের অবসান ঘটাতে হবে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের অস্ত্র হস্তান্তর করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জনগণকে সুরক্ষা প্রদান এবং সব পক্ষ যাতে যুদ্ধবিরতি মেনে চলে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে একটি স্থিতিশীলতা ও সুরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতামূলক সমন্বয়ের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে মোতায়েনের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে প্রস্তুত।’

ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ আয়োজনে দুই দিনব্যাপী এই জাতিসংঘ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হলো শান্তি আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করা এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নকে এগিয়ে নেওয়া।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলি বাহিনী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় এক নৃশংস আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। এই হামলায় প্রায় ৬০,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। লাগাতার বোমাবর্ষণে উপত্যকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, উপত্যকায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।