নেতানিয়াহুর প্রতি মার্কিন সিনেটরের কড়া বার্তা

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক সংকট নিরসনে অবিলম্বে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন সিনেটর ডিক ডারবিন। সোমবার মার্কিন সিনেট অধিবেশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি গাজার পরিস্থিতিকে ‘বিবেকবর্জিত ও নিষ্ঠুর’ বলে আখ্যা দেন।

সিনেটর ডারবিন বলেন, ‘সহজ কথায়, গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ, বিবেকবর্জিত ও নিষ্ঠুর।’ তিনি উল্লেখ করেন, গত সপ্তাহে মার্শি কোর, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং অক্সফামের মতো শতাধিক বেসরকারি সংস্থা এই সংকটের ভয়াবহতা পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং গাজাজুড়ে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রায় তিন মাসের মানবিক সহায়তা অবরোধের ফলে গাজার তিন-চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠী জরুরি বা বিপর্যয়কর ক্ষুধার সম্মুখীন। নবজাতকদের জন্য সামান্যতম গুঁড়ো দুধের সংস্থানও নেই এবং তারা হৃদয়বিদারক মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।’

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের চালানো হামলার নিন্দা জানিয়ে ডারবিন বলেন, ‘হ্যাঁ, হামাস ইসরায়েলের ওপর এক নৃশংস হামলার মাধ্যমে এই সংঘাত শুরু করেছিল... কিন্তু আমি বারবার ইসরায়েলের প্রতি আবেদন জানিয়েছি... ক্রোধ, বেদনা ও হারানোর যন্ত্রণার ঘোর থেকে বেরিয়ে এসে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সতর্ক হোন এবং অনুধাবন করুন যে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পরাজিত করার জন্য কেবল সামরিক সমাধানই যথেষ্ট নয়।’

একইসঙ্গে তিনি নেতানিয়াহুকে একটি বিচক্ষণ পন্থা অবলম্বন এবং গাজায় অনাহারে থাকা মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা উন্মুক্ত করার আহ্বান জানান।

ডারবিন বলেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, কোনো দৃশ্যমান সমাপ্তি ছাড়া এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে নয়। একটি টেকসই পরিকল্পনার অভাব এবং এই মানবিক মহাবিপর্যয় সুস্পষ্ট ভুল, যা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।’

‘এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে’

ডারবিন জানান, তিনি এবং তার পাঁচজন সিনেট সহকর্মী গত সপ্তাহে গাজায় ‘অবস্থার আমূল পরিবর্তনে’র আহ্বান জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি, মানবিক সহায়তা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য একটি টেকসই পথ তৈরি করা, যেখানে আঞ্চলিক শক্তিগুলো গাজার ব্যবস্থাপনা ও পুনর্গঠনে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, ‘আপনারা টেলিভিশনের পর্দায় অনাহারে কঙ্কালসার শিশুদের এই দৃশ্য, সামান্য খাবারের জন্য থালা হাতে শিশুদের ভিক্ষা করার আকুতি দেখে বিশ্বাস করতে পারেন না যে এটি সঠিক পদক্ষেপ। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’

তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ‘মানবিক সহায়তা অবিলম্বে শুরু করতে হবে। এটি করার সক্ষমতা ইসরায়েলের রয়েছে। তারা যদি তা না করে, তবে এর কোনো অজুহাত থাকতে পারে না।’

সিনেটর ডারবিন গাজার মানবিক সংকট অবসানে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ‘কিছুটা নেতৃত্ব প্রদর্শনের’ আহ্বান জানান। তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন এই বলে, ‘আমি জানি না প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কিসের জন্য অপেক্ষা করছেন, কিন্তু যদি তিনি দেখতেন যে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে বসে সারা বিশ্বের সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কী ধরনের আবেদন পাচ্ছি, যারা এই মানবিক বিপর্যয় থামাতে আমাদের যোগ দিতে অনুরোধ করছে, তাহলে হয়তো তার হৃদয় কিছুটা নরম হতো।’

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক আহ্বানের তোয়াক্কা না করে ইসরায়েলি বাহিনী গত ৭ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে গাজায় নির্বিচার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রায় ৬০,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণে উপত্যকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, উপত্যকায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার সম্মুখীন।