ফিলিস্তিনকে নিঃশর্ত স্বীকৃতির দাবি স্কটিশ দলগুলোর

ফিলিস্তিনকে নিঃশর্ত ও স্থায়ীভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জোরালো দাবি তুলেছে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) এবং স্কটিশ গ্রিনস। একই সঙ্গে, সহিংসতা অব্যাহত থাকলে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বানও জানিয়েছে তারা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের এক ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় স্কটল্যান্ডের রাজনৈতিক দলগুলো এই অবস্থান ব্যক্ত করে।

মঙ্গলবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ঘোষণা করেন যে, তার সরকার সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপ নেবে। তবে এর সঙ্গে তিনি কিছু শর্ত জুড়ে দেন। তিনি বলেন, এই স্বীকৃতি তখনই দেওয়া হবে না, ‘যদি না ইসরায়েলি সরকার গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি অবসানে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে পুনরুজ্জীবিত করে একটি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল শান্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।’

স্টারমারের এই শর্তসাপেক্ষ প্রস্তাবের পরই স্কটল্যান্ডের রাজনৈতিক দলগুলো এর তীব্র সমালোচনা করে। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার ও এসএনপি নেতা জন সুইনি স্টারমারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও জোর দিয়ে বলেছেন, এই স্বীকৃতি অবশ্যই ‘অপরিবর্তনীয়’ হতে হবে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘স্বীকৃতি কোনোভাবেই শর্তসাপেক্ষ হওয়া উচিত নয় এবং সহিংসতা চলতে থাকলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একে সমর্থন করতে হবে।’

তিনি ইসরায়েলি সরকারকে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার এবং গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের তদন্তে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলার আহ্বান জানান।

এর আগে গত সপ্তাহে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ নিশ্চিত করেন যে, ফ্রান্সও সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে।

‘ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি অধিকার, ছাড়ের হাতিয়ার নয়’

স্কটিশ গ্রিনসও স্টারমারের প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেছে, ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি কয়েক দশক আগেই দেওয়া উচিত ছিল এবং এটি শর্তাধীন হতে পারে না।

দলটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছে, ‘কিয়ার স্টারমারের উচিত অবিলম্বে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া, চলমান গণহত্যার নিন্দা করা এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা বন্ধ করা।’

স্কটিশ গ্রিনসের সহ-নেতা ও লোদিয়ান অঞ্চলের এমএসপি (স্কটিশ পার্লামেন্টের সদস্য) লরনা স্লেটার বলেন: ‘ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি একটি অধিকার, কোনো ছাড় আদায়ের হাতিয়ার নয়। স্টারমারের জন্য লজ্জা।’

অন্যদিকে, ওয়েস্ট অব স্কটল্যান্ডের গ্রিন এমএসপি রস গ্রিয়ার এই শর্তসাপেক্ষ স্বীকৃতিকে ‘চরম অন্যায্য একটি কাজ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং লেবার পার্টিকে ইসরায়েলের অপরাধে ‘জড়িত’ থাকার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘স্টারমার ইসরায়েলের স্বীকৃতি প্রত্যাহারের হুমকি দেবেন না, অথচ তিনি ফিলিস্তিনের স্বীকৃতিকে তাদের গণহত্যাকারী নিপীড়কের কর্মকাণ্ডের ওপর শর্তাধীন করে রেখেছেন।’

সেন্ট্রাল স্কটল্যান্ডের স্কটিশ গ্রিন এমএসপি গিলিয়ান ম্যাককে বুধবার এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি কয়েক দশক ধরে বিলম্বিত এবং এটি শর্তসাপেক্ষ হওয়া উচিত নয়।’

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪৯টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এদিকে, ব্রিটিশ সরকারের ওপরও চাপ বাড়ছিল। সম্প্রতি ২৫০ জনের বেশি আইনপ্রণেতা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় এক নৃশংস অভিযান পরিচালনা করে আসছে, যেখানে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। লাগাতার বোমাবর্ষণে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এ ছাড়া, গাজায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি হয়েছে।