জাতিসংঘ: ইসরায়েলের ‘কৌশলগত বিরতি’ যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি

গাজায় ইসরায়েলের একতরফা ‘কৌশলগত বিরতি’ চলমান ব্যাপক মানবিক চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয় বলে বুধবার জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মতে, এই সংকট মোকাবেলায় অবিলম্বে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।

জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক এক সংবাদ সম্মেলনে মানবিক বিষয়ক সমন্বয়কারী সংস্থার (ওসিএইচএ) বরাত দিয়ে বলেছেন, ‘এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বেশি প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র একতরফা কৌশলগত বিরতির মাধ্যমে গাজায় বিপুল পরিমাণ চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রীর নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।’

হক আরও বলেন, জাতিসংঘ ও তার অংশীদার সংস্থাগুলো ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিটি সুযোগ ব্যবহার করলেও, ‘ত্রাণ ও সরবরাহ পৌঁছে দেওয়ার পরিস্থিতি মোটেও যথেষ্ট নয়।’

গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ঘোষিত কৌশলগত বিরতি শুরুর চার দিন পরেও আমরা ত্রাণপ্রার্থীদের মধ্যে হতাহতের ঘটনা দেখতে পাচ্ছি এবং ক্ষুধা ও অপুষ্টির কারণে আরও মৃত্যু হচ্ছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘বাবা-মায়েরা তাদের অভুক্ত সন্তানদের বাঁচানোর জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’

ত্রাণকর্মীরাও যে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে হক জানান, ‘অতিরিক্ত কাজের চাপ, মানসিক অবসাদ এবং চরম ক্লান্তির’ মতো ঘটনা ঘটছে। এর মূল কারণ হিসেবে তিনি সম্মুখসারির কর্মীদের মধ্যে খাদ্যাভাব এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা কেন্দ্রগুলোর কর্মীদের অবস্থার কথা তুলে ধরেন।

তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, ‘বর্তমান জ্বালানি প্রবেশাধিকার জীবনরক্ষাকারী জরুরি চাহিদা মেটাতে অপর্যাপ্ত এবং এটি প্রয়োজনের বিশাল সমুদ্রে এক ফোঁটা জলের মতো।’

গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার বিষয়ে হক বলেন, ‘আমরা মানুষের কাছে নিরাপদে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কোনো চেষ্টাকেই উপেক্ষা করব না... কিন্তু একটি প্রক্রিয়া হিসেবে এর ওপর নির্ভর করা সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত।’ তিনি যোগ করেন যে, জাতিসংঘ আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত নয়, যা ‘কিছু দ্বিপাক্ষিক ব্যবস্থার’ মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, ‘ওসিএইচএ পুনর্ব্যক্ত করছে যে, সমস্ত পারাপার পথ অবশ্যই খুলতে হবে এবং মানবিক ও বাণিজ্যিক পণ্য চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৭ মে থেকে, যখন বিতর্কিত গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন কার্যক্রম শুরু করে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে গাজায় ত্রাণ চাইতে গিয়ে কমপক্ষে ১,২৩৯ জন নিহত এবং ৮,১৫২ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় এক পাশবিক অভিযান চালিয়ে আসছে, যেখানে ৬০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই নিরলস বোমাবর্ষণে উপত্যকাটি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, উপত্যকায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।