গাজায় মানবিক বিপর্যয়: মিশর, জর্ডান ও আমিরাতের আকাশপথে সহায়তা প্রেরণ

ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের মুখে থাকা গাজা ভূখণ্ডে বুধবার আকাশ থেকে মানবিক সহায়তা নিক্ষেপ করেছে মিশর, জর্ডান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। অবরুদ্ধ এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য ও জরুরি সামগ্রী পৌঁছে দিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জর্ডানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পেত্রা জানিয়েছে, দেশটির সেনাবাহিনী ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমানবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে গাজা ভূখণ্ডের ভাইদের জন্য ত্রাণ পৌঁছে দিতে নতুন দফায় আকাশপথে অভিযান’ পরিচালনা করেছে।

সংস্থাটি আরও জানায়, ‘রয়্যাল জর্ডানিয়ান এয়ার ফোর্সের এবং তাদের সহযোগী আমিরাতের দুটি সি-১৩০ বিমান ব্যবহার করে এই সহায়তা নিক্ষেপ করা হয়, যার সঙ্গে সমন্বয় করেছে জর্ডান হাশেমাইট চ্যারিটি অর্গানাইজেশন।’ এতে আরও বলা হয়, ‘গাজার বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে ১৬ টন খাদ্য ও শিশুখাদ্য ফেলা হয়েছে। এর ফলে গত কয়েকদিনে আকাশপথে ফেলা মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৩ টনে।’

এদিকে, মিশরীয় সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গরিব আবদেল হাফেজ ফেসবুকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মিশরের চারটি সামরিক পরিবহন বিমান ‘টন টন খাদ্য সহায়তা নিয়ে’ উড্ডয়ন করেছে। এই বিমানগুলো থেকে ‘গাজার যেসব এলাকায় স্থলপথে পৌঁছানো কঠিন, সেখানে আকাশ থেকে সহায়তা নিক্ষেপ করা হবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো ‘ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের কঠিন জীবনযাত্রা ও তীব্র মানবিক সংকট লাঘব করা। এর পাশাপাশি স্থলপথেও সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।’

এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শনিবার ঘোষণা করেছিল যে তারা গাজায় সীমিত পরিমাণে আকাশপথে সহায়তা ফেলার অনুমতি দেবে এবং মানবিক সহায়তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ‘স্থানীয় কৌশলগত সামরিক কর্মকাণ্ডে বিরতি’ শুরু করেছে।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ এমন সময় এলো যখন গাজায় ক্রমবর্ধমান দুর্ভিক্ষ নিয়ে ব্যাপক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। একইসঙ্গে এই অবরুদ্ধ অঞ্চলে দশ লক্ষাধিক শিশুর সম্ভাব্য গণমৃত্যুর সংকট নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সতর্কতা জারি করা হচ্ছে।

তবে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) আকাশপথে সহায়তা নিক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছে, এর মাধ্যমে বাড়তে থাকা দুর্ভিক্ষ বন্ধ হবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, তেল আবিব একদিকে দুর্ভিক্ষপীড়িত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আকাশপথে মানবিক সহায়তা নিক্ষেপের সীমিত অনুমতি দিয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে গত ২ মার্চ থেকে স্থলপথের ক্রসিংগুলো বন্ধ করে রেখেছে। এর ফলে শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক সীমান্তে আটকে আছে, যা পুরো গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে ইন্ধন জুগিয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মতে, গাজার ২৪ লক্ষ মানুষের চাহিদা মেটাতে দৈনিক ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রয়োজন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অনাহারে অন্তত ১৫৪ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮৯ জনই শিশু।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় এক নৃশংস আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ৬০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, গাজায় চালানো অভিযানের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি হয়েছে।