ভারতের ওপর ট্রাম্পের শুল্কের খড়্গ: নয়াদিল্লিতে রাজনৈতিক ঝড়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ১ আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনার অভিযোগে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি অতিরিক্ত জরিমানারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক বাকযুদ্ধ।

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভারত সব সময় রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কিনেছে এবং রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এমন এক সময়ে তারা এই কাজ করেছে, যখন সবাই চাইছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক।’ তার মতে, ভারত ও চীন তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধের খরচ বহন করছে।

এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পররাষ্ট্রনীতিকে সরাসরি দায়ী করেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে টেক্সাসে ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের পক্ষে মোদির প্রচারণার ‘মূল্য’ এখন দেশকে দিতে হচ্ছে। কংগ্রেস নেতা রাজীব শুক্লা এই পদক্ষেপকে ‘একেবারে ভুল’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘সরকার যাকে বন্ধু মনে করত, সেই ট্রাম্প এখন আমাদের আঘাত করেছেন। এত বন্ধুত্বের পরও ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে এমন করলেন কেন?’ দলের আরেক সংসদ সদস্য মাল্লু রবি প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণাকে ‘হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করে এর উপযুক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

কংগ্রেসের পাশাপাশি আম আদমি পার্টিও (এএপি) সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে। এএপি সাংসদ সঞ্জয় সিং বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতিদিন ভারতের অপমান করছেন। ট্রাম্প তো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকে পর্যন্ত ভারত থেকে আইফোন তৈরি না করতে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, তিনি পাকিস্তানকে ভালোবাসেন। এটি নিয়ে ভারতের ভাবা উচিত।’

অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ বললেও বিষয়টি নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রায়ই তার বক্তব্য পরিবর্তন করেন। বিজেপি সাংসদ হেমাং যোশি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট একতরফা বিবৃতি দিতে থাকেন। ভারতের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কিছু না বলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা উচিত।’ তবে দলের আরেক সাংসদ প্রতাপ সারাঙ্গি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী, মোদির নেতৃত্বে আমেরিকার এই পদক্ষেপ সফল হতে দেওয়া হবে না। আমরা উপযুক্ত জবাব দেবো।’

উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে আসছেন। তার দাবি, এই দেশগুলো আগে থেকেই মার্কিন পণ্যের ওপর অন্যায়ভাবে উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়ে রেখেছে।