যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান: হামলার ক্ষতিপূরণ দিন, তারপর আলোচনা

গত মাসে মার্কিন হামলায় হওয়া ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ না দিলে পারমাণবিক আলোচনা পুনরায় শুরু হবে না বলে জানিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সম্প্রতি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই শর্ত দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অপ্রত্যাশিত আগ্রাসনের পর আলোচনার পথ সংকীর্ণ হয়ে এসেছে এবং ইরান আর আগের মতো স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরতে আগ্রহী নয়।

আব্বাস আরাঘচি বলেন, ‘আলোচনার মাঝপথে তারা কেন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। ভবিষ্যতেও যে এমন ঘটনা ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি, আমাদের ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণও দিতে হবে।’

ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় শুরু হওয়া ১২ দিনের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের একাধিক পারমাণবিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধে সরাসরি না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের এই হস্তক্ষেপে ইরানজুড়ে ব্যাপক গণরোষ সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির অভ্যন্তরে পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবিও জোরালো হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক আলোচনাকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি যে শান্তিপূর্ণ, সে বিষয়ে নিজের দেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন আরাঘচি। তবে তিনি স্বীকার করেন, দেশের রাজনৈতিক মহলে এখন আলোচনাবিরোধী মনোভাব তীব্র। অনেকেই বলছেন, ‘আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই, ওদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না।’

তবে তার মতে, ‘এই আগ্রাসন প্রমাণ করেছে যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সামরিক উপায়ে থামানো সম্ভব নয়। তবে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খোঁজা যেতে পারে।’

মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের বার্তার বিষয়ে আরাঘচি জোর দিয়ে বলেন, ইরান বাস্তব আস্থা তৈরির পদক্ষেপ দেখতে চায়, যার মধ্যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সত্যিকারের উদ্যোগ প্রয়োজন। আমার বার্তাটি স্পষ্ট, এতে কোনো জটিলতা নেই।’

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন আরাঘচি ও উইটকফের মধ্যে আলোচনার মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে ইসরায়েল অপ্রত্যাশিতভাবে ইরানের ভূখণ্ডে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এতে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এই হামলায় ১৩ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও একাধিক সামরিক কমান্ডারসহ এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। এর জবাবে ইরান পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইসরায়েলে ২৯ জনকে হত্যা করে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ফোরদো ও নাতাঞ্জে অবস্থিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে সংঘাতকে আরও উসকে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘শূন্য সমৃদ্ধকরণ’ নীতিকে তিনি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। আরাঘচি বলেন, ‘আমরা আলোচনায় বসতে পারি, তারা তাদের যুক্তি তুলে ধরবে, আমরাও আমাদের যুক্তি দেবো। কিন্তু শূন্য সমৃদ্ধকরণ নিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না।’

এদিকে, এই যুদ্ধ ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বিভেদ বাড়িয়েছে। অনেকেই এখন প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির আহ্বান জানাচ্ছেন। যদিও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ফতোয়া অনুসারে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি নিষিদ্ধ। এটিই দেশটির সরকারি অবস্থান।

পশ্চিমা কর্মকর্তাদের ধারণা, ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলা সত্ত্বেও ইরান ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার কাছাকাছি। ইরান আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করলেও আরাঘচি জানিয়েছেন, চলতি আগস্টে সংস্থাটির সঙ্গে সহযোগিতার নতুন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।