তথ্য ‘জালিয়াতির’ অভিযোগে পরিসংখ্যান প্রধানকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজারে অশনি সংকেত দেখা দেওয়ার ঠিক পরপরই এক নাটকীয় সিদ্ধান্তে দেশের প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শ্রম পরিসংখ্যান দপ্তরের (বিএলএস) কমিশনার এরিকা ম্যাকএনটারফারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চাকরির তথ্য বিকৃত করার মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তিনি, যদিও এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ এমন এক দিনে এলো, যেদিন প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম, মাত্র ৭৩ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টির তথ্য দেওয়া হয়। এই প্রতিবেদনকে বিশেষজ্ঞরা শ্রমবাজারের জন্য একটি ‘গেমচেঞ্জার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, যা মন্দার ঝুঁকিকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে পূর্ববর্তী দুই মাসের তথ্যের ব্যাপক সংশোধন। শুক্রবার প্রকাশিত সংশোধনীতে দেখা যায়, মে মাসে চাকরির সংখ্যা ১ লাখ ৪৪ হাজার থেকে কমিয়ে মাত্র ১৯ হাজারে এবং জুনে ১ লাখ ৪৭ হাজার থেকে কমিয়ে ১৪ হাজারে নামানো হয়েছে। করোনা মহামারির পর মার্কিন শ্রমবাজারে এত বড় ধাক্কা আর আসেনি। বেকারত্বের হারও ৪.১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪.২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ ট্রাম্প সরাসরি এই সংখ্যাকে জালিয়াতি বলে অভিহিত করেন। তিনি লেখেন, ‘আমাকে ও রিপাবলিকানদের খারাপ হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য এই সংখ্যাগুলো জালিয়াতি করে তৈরি করা হয়েছে।’ ট্রাম্পের দাবি, ম্যাকএনটারফার ‘ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনে জেতাতে’ ইচ্ছাকৃতভাবে চাকরির সংখ্যা কম দেখিয়েছেন।

সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এমন লোক দরকার, যাঁদের আমরা বিশ্বাস করতে পারি।’

তবে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা ট্রাম্পের এই অভিযোগ ও সিদ্ধান্তকে ভিন্ন চোখে দেখছেন। নেভি ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিদার লং-এর মতে, জুলাইয়ে তৈরি হওয়া নতুন কর্মসংস্থানের ৭৫ শতাংশই এসেছে কেবল স্বাস্থ্যসেবা খাত থেকে, যা অর্থনীতির সার্বিক দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা, বছরের শুরু থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতি এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ ও নিয়োগ পরিকল্পনায় আঘাত হেনেছে।

এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের ওপর সুদের হার কমানোর চাপ তীব্র হচ্ছে। ফেডের শীর্ষ কর্মকর্তা মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালারও ইঙ্গিত দিয়েছেন, শুল্কজনিত মূল্যস্ফীতিকে সাময়িক ধরে নিয়ে এখন সুদের হার না কমালে শ্রমবাজার আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এদিকে, একজন নিরপেক্ষ সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্তের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক মার্কিন অর্থমন্ত্রী ল্যারি সামার্স এই ঘটনাকে স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের সাথে তুলনা করে বলেন, ‘সংখ্যা পছন্দ না হলে কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা স্বৈরতান্ত্রিক দেশের কাজ—গণতান্ত্রিক দেশের নয়।’

শ্রম পরিসংখ্যান দপ্তরের সাবেক প্রধান উইলিয়াম বিচ এই পদক্ষেপকে ‘বিপজ্জনক উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি দপ্তরের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে।’ একইভাবে, ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর বিজনেস ইকোনমিকস (এনএবিই) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের সংশোধন মানেই জালিয়াতি নয়, বরং এটি পরিসংখ্যান দপ্তরগুলোর ওপর ক্রমাগত বাজেট সংকটের প্রতিফলন হতে পারে।