মার্কিন দূতের সফর ঘিরে নতুন বিতর্ক, গাজায় মানবিক সংকট ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ চরমে

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে শত শত মানুষের বিক্ষোভের মধ্যেই তেল আবিবে ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ। শনিবার ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ এ খবর জানিয়েছে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ‘হস্টেজ স্কয়ারে’ এটি ছিল উইটকফের তৃতীয় সফর। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ও ইসলামিক জিহাদ অপুষ্টিতে শীর্ণ দুই ইসরায়েলি জিম্মি, এভিয়েতার ডেভিড এবং রম ব্রাস্লাভস্কির একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশের পরপরই তিনি এ সফরে আসেন, যা নতুন করে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

উইটকফ বিক্ষোভকারীদের বলেন, ‘বেশিরভাগ ইসরায়েলি জিম্মিদের ঘরে ফিরে পেতে চায়’ এবং ‘বেশিরভাগ গাজাবাসীও জিম্মিদের ঘরে ফেরা দেখতে চায়, তারা গাজার পুনর্গঠন চায়’। তিনি আরও যোগ করেন যে, অবশিষ্ট ৫০ জন জিম্মির মুক্তি এবং যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি চুক্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা ‘চলমান’ রয়েছে।

তবে দৈনিক ইয়েদিওত আহারোনোত-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈঠকের পর জিম্মিদের পরিবারের অনেক সদস্য হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, আলোচনার শেষে উত্তরের চেয়ে প্রশ্নই বেশি রয়ে গেছে।

এর আগে শুক্রবার উইটকফ দক্ষিণ গাজায় বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) পরিচালিত একটি সহায়তা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, এই সফরের উদ্দেশ্য হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়া এবং গাজার মানুষের জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছানোর পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য করা’।

গাজায় মার্কিন-ইসরায়েলি সমন্বয়, বিশেষ করে জিএইচএফ-এর ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মধ্যেই এই সফর অনুষ্ঠিত হলো। ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, এই ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাটি মানবিক সহায়তার আড়ালে বাস্তুচ্যুতির একটি হাতিয়ার এবং ত্রাণপ্রত্যাশী বহু ফিলিস্তিনির জন্য একটি ‘মরণফাঁদ’ হিসেবে কাজ করছে। মে মাস থেকে ত্রাণ সামগ্রীর জন্য অপেক্ষা করার সময় ১,৩০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার হামাস এই সফরকে একটি ‘প্রচারমূলক চমক’ হিসেবে নিন্দা করেছে। তাদের মতে, মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘পরিকল্পিতভাবে অনাহারে রাখার যে অভিযান’-এর অভিযোগ তুলেছেন, সেই বিষয়ে বিশ্বব্যাপী তৈরি হওয়া ক্ষোভকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই এই আয়োজন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৯৩ জন শিশুসহ অন্তত ১৬৩ জন ফিলিস্তিনি অনাহারজনিত কারণে মারা গেছেন।

যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় এক নৃশংস অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ৬০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, উপত্যকায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি হয়েছে।