আফগানিস্তানে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে বৃহৎ চুক্তি

দেশজুড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের একটি বিশাল বিনিয়োগ চুক্তি করেছে আফগানিস্তান সরকার। শনিবার (২ আগস্ট) দেশটির জ্বালানি ও পানি বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে। আফগান প্রশাসন চুক্তিটিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জ্বালানি ও পানি বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী আব্দুল লতিফ মনসুর এটিকে ‘আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। দেশের বিপুল জ্বালানি সম্পদের কথা উল্লেখ করে তিনি অন্য বিনিয়োগকারীদেরও এই খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আজকের পৃথিবীতে বিদ্যুৎ মানুষের মৌলিক চাহিদা। স্বাস্থ্যসেবা, শিল্প ও পরিবারের দৈনন্দিন জীবনে এর অপরিহার্যতা অস্বীকার করার উপায় নেই।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আজিজি এনার্জি ইনভেস্টের প্রধান মিরওয়াইস আজিজি জানান, আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্পের কারিগরি নকশা চূড়ান্ত হবে। প্রথম পর্যায়ে দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হবে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়ে ২০৩২ সালের মধ্যে তা পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

চুক্তি অনুসারে, দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ যেমন—সূর্যালোক, কয়লা, পানি, বায়ু ও গ্যাস ব্যবহার করে এই বিশাল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। কয়লা ব্যবহার করে বালখ, বামিয়ান, হেরাত ও বাগলানে মোট তিন হাজার ৪০০ মেগাওয়াওয়াট এবং গ্যাস ব্যবহার করে জাওজান, হেরাত ও উত্তরাঞ্চলে তিন হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে কাবুল, কাপিসা ও দাইকুন্দিতে দুই হাজার ৪০ মেগাওয়াট, বায়ুবিদ্যুতের মাধ্যমে হেরাত ও ফারাহ অঞ্চলে ৭০০ মেগাওয়াট এবং সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে কাবুল, কান্দাহার ও গজনীতে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

প্রকল্পটির মূল উদ্যোক্তা মিরওয়াইস আজিজি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পে ১৭ থেকে ১৮ জন বিদেশি বিশেষজ্ঞ যুক্ত থাকবেন। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আফগান নাগরিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরই ৯৮ শতাংশ কর্মশক্তিতে পরিণত করা। এ জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও স্থাপন করা হবে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আফগানিস্তানে পানি, বায়ু, গ্যাস ও সূর্যের যে বিপুল সম্ভার রয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় এ প্রকল্প অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’

আফগানিস্তানে যখন বিদ্যুতের তীব্র ঘাটতি শিল্প ও সাধারণ মানুষের জীবনে বড় সংকট তৈরি করেছে, তখন এই প্রকল্প দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।