গাজার দুঃসহ স্মৃতি: ব্রিটিশ চিকিৎসকের বর্ণনায় উঠে এলো ভয়াবহ বাস্তবতা

গাজা থেকে সম্প্রতি ফিরে আসা এক ব্রিটিশ চিকিৎসক অভিযোগ করে বলেছেন, ‘ইসরায়েলি একটি ড্রোন তার এক সহকর্মীকে বাড়ি পর্যন্ত অনুসরণ করে তার পুরো পরিবারকে হত্যা করেছে।’ স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডা. নাদা আল-হাদিথি গাজার পরিস্থিতিকে ‘পুরোপুরি বিপর্যস্ত’ বলে বর্ণনা করেছেন।

সহকর্মীর পরিবারের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ডা. আল-হাদিথি বলেন, ‘তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও পরিশ্রমী একজন মানুষ। একদিন বাড়ি ফেরার পথে একটি ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার ড্রোন তাকে অনুসরণ করে। পথে একা পেলেও ড্রোনটি তাকে লক্ষ্যবস্তু বানায়নি। পরে তিনি যখন তার তাঁবুতে যান এবং তার তিন শিশু সন্তান তাকে জড়িয়ে ধরে, ঠিক তখনই ড্রোনটির পরিচালক তাদের সপরিবারে হত্যা করে।’

সাক্ষাৎকারে ডা. হাদিথি গাজার আরও কয়েকটি হৃদয়বিদারক ঘটনার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ২১ বছর বয়সী এক নারী তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসতেন। ইসরায়েলি বোমা হামলায় তিনি তার গর্ভের সন্তানকে হারিয়েছেন।

ডা. হাদিথি বলেন, ‘ইসরায়েলি হামলায় ওই নারীর স্বামী ঘটনাস্থলেই মারা যান। তিনি নিজেও একটি চোখ ও দুটি পা হারিয়েছেন। নারীটি চরম অপুষ্টিতে ভুগছিলেন। তার জন্য কোনো ভিটামিন, খাবার বা চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। এমন অবস্থায় একদিন হঠাৎ তার গর্ভের শিশুর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়।’

গাজায় তার তিন সপ্তাহের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘সেখানে প্রতিদিন একটি স্কুল ক্লাসের সমান সংখ্যক শিশু মারা যাচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরাও সাধারণ মানুষের মতোই অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। রোগীদের মধ্যে অপুষ্টি ও ক্ষুধার মাত্রা প্রতিদিন কেবল বাড়ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের বোমা হামলার তীব্রতাও অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিদিন মানুষ পুড়ছে, ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। নিরাপদ বলে বিবেচিত এলাকাতেও তাবুতে থাকা মানুষের ওপর হামলা হচ্ছে। পরিস্থিতি এক কথায় অবর্ণনীয়।’

ডা. আল-হাদিথি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘গাজার মতো ছোট্ট একটি জায়গায় ২০ লাখ মানুষ বাস করছে, যাদের কাছে পর্যাপ্ত পানি, খাবার, ওষুধ বা চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। ফলে গাজার পরিস্থিতি দিন দিন মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।’

সবশেষে তিনি গাজার স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত ফিলিস্তিনি সহকর্মীদের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমি এত মর্যাদাশীল ও আত্মত্যাগী মানুষ আগে কখনো দেখিনি।’