রপ্তানিতে নতুন ইতিহাস, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তুর্কিয়ে

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও রপ্তানি আয়ে এক নতুন ইতিহাস গড়ল তুর্কিয়ে। দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী ওমের বোলাত শনিবার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে দেশটি ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে এক নতুন রেকর্ড অর্জন করেছে। এটি শুধু তুর্কিয়ে'র ইতিহাসে কোনো এক মাসে সর্বোচ্চ রপ্তানির ঘটনাই নয়, বরং দেশটির অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

সামসুন প্রদেশে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী ওমের বোলাত বলেন, ‘আমরা চলতি বছরের জুলাইয়ে আমাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ মাসিক রপ্তানি আয় করেছি। এটি কেবল এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত হওয়া যেকোনো জুলাই মাসের সর্বোচ্চ রপ্তানির পরিসংখ্যান নয়, বরং সব মিলিয়ে গত ১২ মাসের মোট পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও এটি সর্বোচ্চ।’

অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, মাসিক আমদানি বাড়ার গতি কমে এসেছে এবং গত বছরের জুলাই ও চলতি বছরের জুনের তুলনায় বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি বেশ কমেছে। একই সঙ্গে রপ্তানি-আমদানি অনুপাতও আগের চেয়ে ভালো হয়েছে বলে তিনি জানান।

জুলাই মাসের এই সাফল্যকে ‘এক কিংবদন্তিতুল্য মাস’ হিসেবে অভিহিত করে বোলাত বলেন, ‘এক মাসেই ছয়টি বড় অর্জন। আমরা মাসিক রপ্তানিতে ২৫ বিলিয়ন ডলারের সর্বকালের সর্বোচ্চ মাইলফলক ছুঁয়েছি, যা গত বছরের জুলাইয়ের ২২.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ২.৫ বিলিয়ন ডলার বা ১১ শতাংশ বেশি। এই সাফল্য গত ১২ মাসের মোট রপ্তানিতেও অতিরিক্ত ২.৫ বিলিয়ন ডলার যোগ করেছে।’

তিনি আরও জানান, জুনের তুলনায় জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ৪.৫ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পরবর্তী লক্ষ্য মাসিক রপ্তানি ২৬ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া। বোলাত জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের অসাধারণ প্রচেষ্টা দেশের অর্থনীতিতে ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করছে।’

আমদানির বিষয়ে মন্ত্রী জানান, জুলাই মাসে আমদানি ৫.৪ শতাংশ বেড়ে ৩১.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, গত মাসে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি ১২ শতাংশ কমে ৬.৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা জুলাই ২০২৪-এর ৭.৩ বিলিয়ন ডলার থেকে কম। এটি গত নয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ঘাটতি।

পরিষেবা খাতের রপ্তানি নিয়েও আশার কথা শোনান বোলাত। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে এই খাতে তুর্কিয়ে'র আয় ছিল ১০৬ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালে ১১৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং ২০২৫ সালের জন্য ১২১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি উল্লেখ করেন, বাণিজ্যযুদ্ধ ও শুল্ক নিয়ে বিরোধ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক নানা সংঘাত বিশ্ব বাণিজ্য, প্রবৃদ্ধি এবং জ্বালানি ও স্বর্ণসহ বিভিন্ন পণ্যের দামে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও বোলাত জোরের সঙ্গে বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ এবং জ্বালানি খাতে স্থিতিশীলতার একটি স্তম্ভ হিসেবে তুর্কিয়ে তার শক্তিশালী উত্থান ধরে রেখেছে।’

তিনি জানান, বহুপাক্ষিক, দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে তুর্কিয়ে তার বাণিজ্যিক কূটনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে ইতিবাচক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৪টি বাণিজ্য বাধা দূর করা হয়েছে এবং আরও নয় থেকে দশটি বাধা অপসারণের প্রক্রিয়া চলছে।

শুল্ক সংঘকে আধুনিক করার লক্ষ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বোলাত স্মরণ করিয়ে দেন যে, সফল আলোচনার ফল হিসেবে, যে সকল তুর্কিয়ে'র নাগরিক অতীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভ্রমণ করে নিয়মিতভাবে ফিরে এসেছেন, তাদের দীর্ঘমেয়াদী ভিসা দেওয়ার জন্য একটি নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।