গাজায় অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান, বাণিজ্য বৃদ্ধিতেও একমত পাকিস্তান-ইরান

গাজায় অবিলম্বে অস্ত্রবিরতি কার্যকর এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ইসরায়েলের ‘সম্প্রসারণবাদী নীলনকশা’ বন্ধের জন্য জোর আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান ও ইরান। রবিবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সফররত ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘গাজায় এখন আর কথার ফুলঝুরি নয়, বরং নবজাতক, শিশু ও নারীদের হত্যাকাণ্ড থামাতে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। সেখানে আজ একটি রাস্তাও তাদের জন্য নিরাপদ নয়।’

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। সেখানে পানি ও খাদ্যের অভাবে প্রতি ঘণ্টায় শিশু, নারী এমনকি নবজাতকরাও মারা যাচ্ছে।

শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পুরো ইসলামি বিশ্ব এবং সভ্য দেশগুলোকে অবশ্যই এই গণহত্যা বন্ধ করতে হবে; অন্যথায় ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।’

একই ধরনের মতামত প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, ‘ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে লেবানন ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে এবং এখন গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘জায়নবাদী রাষ্ট্রের সম্প্রসারণবাদী নীলনকশা’ মোকাবিলায় ইসলামি বিশ্বের ঐক্যসহ একটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ঐকমত্য অপরিহার্য।

ইরানি প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তার দেশের ১২ দিনব্যাপী যুদ্ধের সময় সমর্থনের জন্য পাকিস্তান ও দেশটির জনগণকে ধন্যবাদ জানান।

এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শরিফ ‘জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে’ পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের অধিকারে ইরানের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান এই বিষয়ে ইরানের নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে রয়েছে।’

বাণিজ্য বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা সহযোগিতা

পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে শনিবার দুই দিনের সফরে পাকিস্তানে পৌঁছান প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান। গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের যুদ্ধের পর আজারবাইজানের পর এটি তার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সফর।

এই সফরে দুই প্রতিবেশী দেশ তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, যদি দুই পক্ষ বাণিজ্য ও অর্থনীতিসহ ‘সকল ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে’ একে অপরকে সহযোগিতা করে, তবে বর্তমান ৩০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য থেকে শীঘ্রই ১ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় সন্ত্রাসীরা উভয় পক্ষের জন্য একটি ‘অভিন্ন হুমকি’ উল্লেখ করে তিনি এই হুমকি মোকাবিলায় উন্নততর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং সহযোগিতার আহ্বান জানান।

এর জবাবে শরিফ বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ ও তেহরানের অবস্থান অভিন্ন এবং পাকিস্তান বা ইরানে এই ধরনের কোনো কার্যকলাপ বরদাশত করা হবে না। শরিফ বলেন, ‘অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত করতে আমাদের সীমান্ত রক্ষা করতে হবে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

কাশ্মির ইস্যুতে ইসলামাবাদকে ‘ধারাবাহিক’ সমর্থনের জন্য ইরানকে ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী।

সফরকালে তথ্যপ্রযুক্তি, আইন ও বিচার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পর্যটন খাতে দুই দেশের মধ্যে একাধিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।