শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে ৪ আগস্ট ২০২৪, নতুন মাত্রা যোগ করে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি। আন্দোলনকারীদের এই ঘোষণায় গোটা দেশের রাজনীতি, প্রশাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। দুই দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহিংসতায় নিহত হন ১০০ জনেরও বেশি।

ছবি: বাসস

আন্দোলনের গতি পাল্টে দেয় ‘মার্চ টু ঢাকা’

প্রথমে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও ৩ আগস্ট বিকেলে শাহবাগে এক বিশাল সমাবেশে আন্দোলনের অন্যতম মুখ নাহিদ ইসলাম একদিন আগেই ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ পালন করার ঘোষণা দেন। বিশ্লেষকদের মতে, হঠাৎ এই পরিবর্তন সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ‘অপ্রস্তুত ও দিশেহারা’ করে তোলে এবং তা আন্দোলনকারীদের জন্য কার্যত ট্রাম্পকার্ড হয়ে ওঠে।

শাহবাগের ভাষণে নাহিদ বলেন,আমাদের লক্ষ্য বিজয়, আর কিছু নয়। শেখ হাসিনার সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলুন।

নিহত অন্তত ৯৩ জন, আহত কয়েক হাজার

৪ আগস্ট সরকারপন্থী কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষে অন্তত ৯৩ জন নিহত হন। ঢাকায় নিহত হন ১২ জন, যাদের অধিকাংশকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়। সিরাজগঞ্জে নিহত হন ১৩ পুলিশসহ ২২ জন।

ফেনী, লক্ষ্মীপুর, রংপুর, সিলেট, পাবনা, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, মাগুরা, জয়পুরহাটসহ অন্তত ২০টি জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

শহীদ মিনারে ৩ আগস্ট লাখো মানুষের সমাবেশ থেকে ‘সরকার পতনের এক দফা’ ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। আন্দোলনকারীরা ঢাকাসহ বড় বড় শহরের রাস্তায় নেমে এলে সরকারও পাল্টা অবস্থান নেয়।

পাল্টা অবস্থানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ সংঘাতে জড়ায়

আন্দোলনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো। রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর-১০, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, উত্তরা ও রামপুরায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয় ছাত্র-জনতা, সরকারপন্থী ও পুলিশের মধ্যে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সংঘর্ষে ২৪টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

ধানমণ্ডিতে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “এই আন্দোলনের দায় আন্দোলনকারীদের। এটা ছাত্রদের নয়, বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র।”

কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ, দেশজুড়ে স্থবিরতা

৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করে সরকার। বন্ধ করে দেওয়া হয় ফোর-জি মোবাইল ইন্টারনেট, কার্যত দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় বলা হয়, জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় ছাত্র-জনতা যেন নিরাপদে ঘরে ফিরে যায়।

তবে এই ঘোষণাকেও আন্দোলনকারীরা ‘ভীতি প্রদর্শনের কৌশল’ হিসেবে আখ্যা দেন।

সাবেক সেনাপ্রধানের আহ্বান: সেনাবাহিনীকে রাজপথে নামাবেন না। একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে যখন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র জনতার মুখোমুখি করবেন না। আমরা নিজেরা নিজেদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারি না।

এই বক্তব্য আন্দোলনকারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব: আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বে ঘোষণা

একই দিন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক একটি প্রস্তাব দেয়।

তারা বলেন, শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগ করে শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজ নেতৃত্বাধীন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করুক।

এই প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

টিআইবির নিন্দা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ৪ আগস্ট এক বিবৃতিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ‘অতিরিক্ত বল প্রয়োগ ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ তীব্র নিন্দা জানায়।

তারা বলেন, একটি অহিংস ছাত্র আন্দোলনকে পরিকল্পিতভাবে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি: শ্রমিক ও নারী সমাবেশ

৪ আগস্ট দুপুরে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা। ৫ আগস্ট সকাল ১১টায় শাহবাগে শ্রমিক সমাবেশ, ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় শহীদ মিনারে নারী সমাবেশ পাশাপাশি সারা দেশে গণঅবস্থান ও সংগ্রাম কমিটি গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার বা অন্য বাধা এলেও আন্দোলন থামবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথেই থাকবো।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.