ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো গৃহবন্দী

২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর অভ্যুত্থান ঘটানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে গৃহবন্দী করার আদেশ দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। দেশজুড়ে ডানপন্থী এই নেতার সমর্থনে ব্যাপক বিক্ষোভের একদিন পরই সোমবার এই রায় ঘোষণা করা হলো।

সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি আলেকজান্দ্রে ডি মোরায়েস এই রায় দেন। বলসোনারোর মামলার তত্ত্বাবধান করার কারণে তিনি সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছেন।

আদালতের আদেশ অনুযায়ী, বলসোনারোর পায়ে ট্র্যাকার পরিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হবে। তিনি শুধুমাত্র তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। এছাড়া তার বাড়ির সব মোবাইল ফোন জব্দ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২০২২ সালের নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে পরাজিত হন বলসোনারো। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার জন্য একটি অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ১২ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বলসোনারো একটি সশস্ত্র অপরাধী সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছেন এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ধ্বংসের চক্রান্ত করেছেন। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বলসোনারোর হাজার হাজার সমর্থক লুলার বিজয়কে অস্বীকার করে দেশটির জাতীয় কংগ্রেস ভবনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা চালায়।

তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি নিজেকে ‘জাদু-শিকারের’ শিকার দাবি করে বলেন, ‘এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, যা কেবল আমার বিরুদ্ধেই করা হচ্ছে।’

এদিকে, এই মামলাকে কেন্দ্র করে ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা বলসোনারোর বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে বিচারপতি মোরায়েসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুলা। তিনি বিষয়টিকে ‘পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ব্রাজিল সরকার বিচারপতি মোরায়েসের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে। তিনি এমন কিছু রাজনীতিবিদের দ্বারা নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছেন, যারা নিজেদের স্বার্থে আমাদের দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করছেন।’

এর আগে, গত জুলাইয়ে বিচারপতি মোরায়েস মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ব্রাজিল সরকারের বিরুদ্ধে তদবির করার অভিযোগে বলসোনারোর ছেলে এদুয়ার্দো বলসোনারোর সম্পদ জব্দ করেন। এদুয়ার্দো বিচারপতি মোরায়েসকে ‘স্বৈরশাসক’ বলেও আক্রমণ করেছিলেন।