‘গাজার জন্য নারীরা গয়না, পুরুষেরা বাড়ি-গাড়ি বিক্রি করছেন’

নিজেদের অর্থনৈতিক সংকট আর বকেয়া বেতনের বোঝা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার অনাহারক্লিষ্ট মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ইরাকের কুর্দিস্তানের সাধারণ মানুষ। যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে অর্থ সংগ্রহের আহ্বানে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। অনেকে নিজেদের বাড়ি, গাড়ি এমনকি নারীরা তাদের গয়না বিক্রি করেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ক্ষুধার্ত মানুষের ছবি ইরাকের কুর্দিদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। এরবিলের আঞ্চলিক সরকার ও বাগদাদের ফেডারেল সরকারের রাজনৈতিক টানাপোড়েনে কুর্দিস্তানের অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় থাকলেও, সেখানকার দুটি প্রধান দাতব্য সংস্থা গাজাবাসীর জন্য অর্থ সংগ্রহে নেমেছে।

এই উদ্যোগের পুরোভাগে থাকা ‘বাখশিন চ্যারিটি’র গণমাধ্যম প্রধান কারজান ফারুক লন্ডনভিত্তিক এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আমরাই প্রথম কুর্দি দাতব্য সংস্থা হিসেবে গাজার অসহায় মানুষের জন্য সাহায্য সংগ্রহ শুরু করি এবং তা এখনও চালিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইরাকি কুর্দিস্তান অঞ্চলের মানুষ আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাড়া দিয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীরা তিন মাস ধরে বেতন না পেলেও নিজেদের সাধ্যমতো দান করছেন। একজন কুর্দি নাগরিককে জানি, যিনি একাই ১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার দান করেছেন। বহু নারী তাদের গয়না বিক্রি করে সেই অর্থ আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।’

কারজান ফারুক জানান, আগে মিশর ও জর্ডানের সীমান্ত খোলা থাকায় তারা সরাসরি ট্রাকে করে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠাতেন। কিন্তু ইসরায়েল সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় এখন শুধু অর্থ পাঠানো হচ্ছে। গাজায় থাকা তাদের প্রতিনিধিরা সেই অর্থে স্থানীয় বাজার থেকে খাদ্য কিনে দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করছেন। তিনি এও উল্লেখ করেন যে, কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকার (কেআরজি) তাদের এই মহৎ উদ্যোগে কখনও বাধা দেয়নি।

একইভাবে ‘বাখতাওয়ারি চ্যারিটি’ নামে আরেকটি কুর্দি দাতব্য সংস্থাও গাজার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। সংস্থাটির প্রধান হাজি কারওয়ান, যিনি কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সংসদের একজন সাবেক আইনপ্রণেতা ছিলেন। গত সোমবার রাতে তিনি তার ফেসবুক পাতায় জানান, তার সংস্থা উত্তর গাজার শরণার্থী শিবিরে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর কাছে শিশুদের জন্য দুধ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।

কুর্দিস্তানের বেসরকারি সংস্থাগুলো এগিয়ে এলেও আঞ্চলিক সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে গাজার জন্য কোনো সাহায্যের ঘোষণা দেয়নি। তবে, ইরাকের বহু বাস্তুচ্যুত ও সংকটাপন্ন কুর্দি জনগণ গাজাবাসীর দুর্দশার সঙ্গে গভীর সংহতি প্রকাশ করে চলেছেন।

সূত্র: দ্য নিউ আরব