‘আপা আর আসবে না, কাকা আর হাসবে না’—চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল ইসলাম সানতুর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। জুলাই গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সরকারি অনুষ্ঠানে তার এই মন্তব্য সরকারি কর্মচারীদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

মো. সাইফুল ইসলাম সানতুর

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদের মতে, এটি ‘সরকারি কর্মচারীর আচরণের স্পষ্ট লঙ্ঘন’। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশাসন ও পুলিশকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এমন রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান কঠোর পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘এমন ঘটনায় যদি অ্যাকশন না নেওয়া হয় তাহলে আজকে একজন বলেছে কালকে আরেকজন বলবে, এরপর একশ জন বলবে।’ বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক প্রধান মোহাম্মদ নুরুল হুদাও এই বক্তব্যকে ‘চাকরির নিয়ম-কানুনের পরিপন্থী’ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, কে ক্ষমতায় আসবে বা আসবে না, তা নির্ধারণের এখতিয়ার কোনো পুলিশ কর্মকর্তার নেই।

তবে, দেশজুড়ে এই তীব্র সমালোচনার মধ্যেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। বুধবার সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, তিনি এখনো ‘কিছুই জানেন না’।

অবশ্য অভিযুক্ত পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু দাবি করেছেন, তার বক্তব্য সমালোচিত হওয়ার মতো কিছু নয় এবং এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। বিবিসির বরাতে জানা যায়, তিনি বলেন, ‘আমি যেটা বলেছি ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যে, কাউকে আসলে উদ্দেশ্য বা মেনশন করে বলি নাই। যারাই ষড়যন্ত্র করে, এটা প্রতীকী অর্থে বলা।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত নিহতদের স্বজনদের সাহস জোগাতেই তিনি এ কথা বলেছেন বলে দাবি করেন।

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি ওই বিতর্কিত মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি আরও বলেন, ‘শত্রুরা কিন্তু আবার আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মনে করতে হবে, এটা তাদের সাইবার ওয়ারফেয়ারের একটা অংশ। এই অংশকে আপনাদের প্রতিহত করতে হবে।’

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়া, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া বা নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু অতীতেও বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। জামালপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার ওসির বিরুদ্ধেও ক্ষমতাসীন দলকে সুবিধা দিতে বিতর্কিত মন্তব্য করার নজির রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের ঘটনা প্রশাসনের দলীয়করণের পুরনো চেষ্টারই পুনরাবৃত্তি, যা একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.