গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ

গত এক বছরে তিনজন সাংবাদিক হত্যা, প্রায় পাঁচ শতাধিক সাংবাদিকের ওপর হয়রানি এবং গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরিচ্যুতির ঘটনায় দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। একইসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়ার যে চিত্র উঠে এসেছে, তাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদের স্বাক্ষর করা এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ ও দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর একটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, তা গত এক বছরে পূরণ হয়নি। নোয়াব জানায়, ‘গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার যে প্রত্যাশা নিয়ে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, সেখানে তথ্যপ্রকাশ, মতপ্রকাশ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত এক বছরে সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।’

সাম্প্রতিক সময়ে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার ঘটনাকে উদ্বেগজনক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে নোয়াব। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইনানুগ প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে ‘মব’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতা তৈরি করে একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। নোয়াবের মতে, কর্মীদের দেনা-পাওনা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকলে তার নিষ্পত্তির জন্য শ্রম আদালত এবং সংবাদ সংক্রান্ত অভিযোগের জন্য বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল নির্ধারিত স্থান। কিন্তু সেই পথে না হেঁটে পত্রিকার কার্যালয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির মাধ্যমে মালিকপক্ষকে ভয়ভীতি দেখানোর সংস্কৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি।

টিআইবির প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে নোয়াব জানায়, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দেশের ৪৯৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী হত্যা মামলায় ২৬৬ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে একটি বড় বাধা। এ ছাড়া দায়িত্ব পালনকালে তিনজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং কমপক্ষে ২৪ জন গণমাধ্যমকর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। একই সময়ে ৮টি সংবাদপত্রের সম্পাদক এবং ১১টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তাপ্রধানকে বরখাস্ত করা হয়।

এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি অবাধ ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের স্বার্থে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ চেয়েছে নোয়াব। সংগঠনটি বিশ্বাস করে, ‘গণমাধ্যমের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে তা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিতকে আরও মজবুত করবে।’