শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির এক বছর পূর্ণ হওয়ার মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এখন যেন প্রতিবেশী ভারতের কলকাতা। শহরের একটি ব্যস্ত উপনগরীর বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে গোপনে কার্যক্রম চালাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এখানেই একটি পরিচয়হীন দপ্তরের চার দেওয়ালের ভেতর থেকে দলের শীর্ষ নেতারা আঁকছেন ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণের রূপরেখা।

ছবি - সংগৃহীত

এই দপ্তরটি এতটাই সতর্কতার সঙ্গে পরিচালিত হয় যে, বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংযোগ থাকতে পারে। প্রায় ৫০০-৬০০ বর্গফুটের এই বাণিজ্যিক অফিসে নেই কোনো সাইনবোর্ড, এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বা শেখ হাসিনার কোনো ছবিও রাখা হয়নি। দলের এক নেতার ভাষায়, ‘আমরা সচেতনভাবেই পরিচিতি গোপন রাখতে চেয়েছি। এটা মূলত বৈঠক আর যোগাযোগের জন্য একটি বাণিজ্যিক অফিস, যা আমরা পার্টি অফিস বলি।’ ছোট পরিসরে ৩০-৩৫ জনের বৈঠক এখানেই সারা হয়, তবে বড় জমায়েতের জন্য এখনো রেস্তোরাঁ বা ব্যাঙ্কোয়েট হলই ভরসা।

দলের সুতোয় টান পড়ছে দিল্লি থেকে। সেখানেই অবস্থান করছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। গত ৩১ জুলাই তিনি দিল্লির অদূরে দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। অন্যদিকে, কলকাতা ও এর আশপাশের অঞ্চলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন দ্বাদশ সংসদের প্রায় ৮০ জন সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। তাদের নিত্য আনাগোনাতেই মুখর থাকে কলকাতার এই গোপন দপ্তর।

ভারতে অবস্থানরত নেতাদের মূল কৌশল হলো, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘ব্যর্থতা’গুলোকে জোরালোভাবে তুলে ধরা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে এই সরকার সব দিক থেকেই ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, বিচারব্যবস্থা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এখন তারা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ভারত আর শেখ হাসিনার ওপর দায় চাপাচ্ছে। মানুষের মধ্যে একটা “ইন্ডিয়া ফোবিয়া, হাসিনা ফোবিয়া” তৈরির চেষ্টা চলছে।’

তবে তৃণমূল কর্মীরা যখন দেশে দমন-পীড়নের শিকার, তখন শীর্ষ নেতাদের ভারতে অবস্থান নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। এই প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, ‘দেশে থাকলে আমাদের হয়তো জেলে থাকতে হতো বা মেরেও ফেলা হতো। তখন কি দলকে সংগঠিত করা বা সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরার কাজগুলো করা সম্ভব হতো?’ তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাসিত নেতাদের বিদেশ থেকে দল পরিচালনার উদাহরণ টেনে আনেন।

প্রশ্ন ওঠে, এই বিপুল কর্মকাণ্ডের অর্থের জোগান আসছে কোথা থেকে? নেতারা জানাচ্ছেন, দেশ-বিদেশে থাকা দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরাই এই দুঃসময়ে এগিয়ে আসছেন। তবে জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আনতে হয়েছে অনেককে। পঙ্কজ দেবনাথের কথায়, ‘যারা ঢাকায় গাড়ি ছাড়া চলতেন না, তাদের অনেকেই এখন কলকাতার গণপরিবহন ব্যবহার করছেন। আমি নিজে আরও তিনজনের সঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে থাকি। আসলে সঞ্চিত অর্থে যতটা স্বল্প খরচে চলা যায়, সেই চেষ্টাই করছি।’

এদিকে, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হুসেইনও গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘হাজার হাজার ছাত্রলীগ কর্মী দেশে ক্যাম্পাসে যেতে পারছে না, পরীক্ষা দিতে পারছে না। শুধু ছাত্রলীগ নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পরিবারের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।’

আপাতত ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মই আওয়ামী লীগের প্রচার ও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং নিয়মিত লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন নেতারা। তবে কতদিন এই নির্বাসিত জীবন, তার কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। ওবায়দুল কাদেরের কথায়, ‘দিনক্ষণ ঠিক করে রাজনৈতিক লড়াই হয় না, আবার লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.