তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ, শুল্ক ও এনবিআর সংকটকে দায়ী করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় এই তিন মাসে রপ্তানি আয় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ কমে ৯১১ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এই পতনের পেছনে মূলত দুটি প্রধান কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নতুন করে আরোপিত পাল্টা শুল্কের প্রভাব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অভ্যন্তরীণ সংকট।

প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ সংকটের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ তৈরির সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংস্থাটির কর্মকর্তারা প্রায় দুই মাসব্যাপী আন্দোলন করেন। এর অংশ হিসেবে গত ২৮ ও ২৯ জুন দেশজুড়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়। এই ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে বিলম্বিত হয়, যা সময়মতো পণ্য রপ্তানিতে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার হলেও এর অর্থনৈতিক প্রভাব ছিল গুরুতর, যা নিরূপণে বর্তমানে একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি কাজ করছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ওয়াশিংটনের পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা রপ্তানিকারকদের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি করে, যার ফলে অনেক ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়ে যায়। যদিও প্রস্তাবিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে পরবর্তীতে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, এই পরিবর্তন বৈশ্বিক ক্রেতাদের মনে সংশয় তৈরি করে। তবে আশার কথা হলো, বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের ওপরও একই হারে (২০%) শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ এবং চীনের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক থাকায় তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি এই প্রান্তিকে পোশাক খাতের মূল্য সংযোজনেও পতন ঘটেছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মোট ৯১১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির বিপরীতে কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৩৯৪ কোটি ডলার। ফলে মূল্য সংযোজনের হার দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকের ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশের চেয়ে কম। মূলত তুলা, সুতা ও অন্যান্য সরঞ্জাম আমদানির খরচ বাদ দিয়ে মূল্য সংযোজন হিসাব করা হয়।

মূল্য সংযোজনের এই পরিসংখ্যান নিয়েও অতীতে জটিলতা ছিল। ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কর্তৃক রপ্তানি আয় বাড়িয়ে দেখানোর একটি বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসে। পরিসংখ্যান সংশোধনের পর দেখা যায়, বিগত সাতটি প্রান্তিকে পোশাক খাতের মূল্য সংযোজন কৃত্রিমভাবে স্ফীত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ফুলে-ফেঁপে একসময় মূল্য সংযোজন ৭২ শতাংশ দেখানো হলেও সংশোধনের পর তা ৫৭ থেকে ৬২ শতাংশের মধ্যে নেমে আসে, যা খাতের প্রকৃত অবস্থাকে সামনে নিয়ে আসে।