জাতিসংঘ: গাজা দখলের পরিকল্পনা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে

ইসরায়েলের গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখলের পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার টুর্ক। পরিকল্পনাটি অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার (৮ আগস্ট) দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘দখলকৃত গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েল সরকারের পূর্ণ সামরিক দখলের পরিকল্পনা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’ আরব নিউজের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায়ে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে তার দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে হবে এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পথ তৈরি করতে হবে। গাজা দখলের এই পরিকল্পনা সেই রায়ের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।’

একই সুরে এই পদক্ষেপের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে জর্ডান ও তুরস্ক। জর্ডানের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গাজায় ইসরায়েলের সম্পূর্ণ সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে।’ দেশটির রাষ্ট্রদূত সুফিয়ান আল-কুদাহ এই পরিকল্পনাকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অবরোধ ও গণহত্যার নীতিরই ধারাবাহিকতা’ বলে উল্লেখ করেন। জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছেন এবং ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি তার দেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

তুরস্কও কঠোর ভাষায় এর সমালোচনা করেছে। আঙ্কারার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘নেতানিয়াহুর উগ্র ডানপন্থী সরকার গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, যা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

এদিকে পশ্চিমা দেশগুলোও ইসরায়েলকে এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত কেবল মানবিক সংকটকেই আরও গভীর করবে।’ তিনি জোরপূর্বক জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়ে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই পদক্ষেপ সংঘাত সমাধানে বা জিম্মিদের মুক্তিতে কোনোভাবেই সাহায্য করবে না, বরং আরও রক্তপাত ঘটাবে।’

ডেনমার্ক ও চীনও ইসরায়েলি পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গাজা ফিলিস্তিনিদের, এবং এটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসরায়েলকে অবিলম্বে এই বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।’

এর আগে শুক্রবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা শহর পুরোপুরি দখলের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।