গাজা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করল ইসরায়েলি নিরাপত্তা ক্যাবিনেট

প্রায় দুই বছর ধরে চলমান যুদ্ধে গাজা উপত্যকার সামরিক অভিযান আরও সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ক্যাবিনেট। এই পদক্ষেপে দেশ-বিদেশে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসরায়েল। খবর রয়টার্স।

শুক্রবার জার্মানি ঘোষণা করেছে, গাজায় ব্যবহারের উপযোগী সামরিক সরঞ্জাম ইসরায়েলে রপ্তানি স্থগিত করা হবে। এ সিদ্ধান্তকে ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ব্রিটেনসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি বলেছেন, কিছু দেশ হামাসের পরিবর্তে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। ২০২৩ সালে হামাসের প্রাণঘাতী হামলার মাধ্যমে এই যুদ্ধের সূচনা হয়।

গাজায় বন্দি থাকা জিম্মিদের পরিবার এবং বিরোধী নেতারা সতর্ক করে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত জিম্মিদের জীবনের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করবে। বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ একে ‘বিপর্যয়’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পরামর্শ উপেক্ষা করছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, চরম-ডানপন্থী মন্ত্রীরা নেতানিয়াহুকে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানে ঠেলে দিচ্ছেন, যা জিম্মি ও সেনাদের প্রাণহানি ঘটাতে পারে।

নেতানিয়াহু ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ইসরায়েল পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় না, তবে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে এলাকা আরব বাহিনীর হাতে তুলে দিতে চায়।

ইসরায়েলি সেনারা বর্তমানে গাজার প্রায় ৭৫% এলাকার নিয়ন্ত্রণে আছে। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আভিভি বলেছেন, গাজা সিটি দখল করা মানে গাজার ৮৫% এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়া। ‘গাজা সিটি হচ্ছে সরকারের কেন্দ্র, আর হামাসের কাছে এর পতন মানেই পুরো সংগঠনের পতন,’ মন্তব্য করেন তিনি।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন ইসরায়েলকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। আঞ্চলিক শক্তি সৌদি আরবও গাজা দখলের যেকোনো পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হাকাবি প্রশ্ন তুলেছেন কেন বিশ্ব আবারও হামাসের পরিবর্তে ইসরায়েলের ওপর চাপ দিচ্ছে। তার দাবি, হামাস কোনো সমঝোতায় আসতে অনিচ্ছুক, আর ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নিরস্ত্র না হলে শান্তি সম্ভব নয়।

সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ইসরায়েলি চান কূটনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের ইতি টেনে জিম্মিদের মুক্ত করা হোক। জিম্মিদের পরিবার বলছে, গাজা দখলের পরিকল্পনা মানে তাদের ত্যাগ করা।

একজন তেলআবিবের হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, এটি এখনো বন্দি থাকা জিম্মিদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের শামিল, এবং এই সময় এটি নেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত।