গ্যাং সহিংসতায় বিপর্যস্ত হাইতি, তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি

গ্যাং-নিয়ন্ত্রিত ভয়াবহ সহিংসতা ও অরাজকতা মোকাবিলায় অবশেষে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে হাইতির সরকার। দেশটির পশ্চিমাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং আর্টিবোনাইট ডিপার্টমেন্টে তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। শনিবার (৯ আগস্ট) সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

শনিবার প্রকাশিত এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, আর্টিবোনাইট অঞ্চলটি হাইতির ‘ভাতের ঝুড়ি’ হিসেবে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এখানে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বেসামরিক জীবনযাত্রা এবং দেশের বিভিন্ন খাত নিরাপত্তাহীনতার কারণে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি।’ জরুরি অবস্থার আওতায় সরকার কৃষি ও খাদ্যসংকট মোকাবিলারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

২০১৯ সাল থেকে হাইতিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গ্যাং সহিংসতা তীব্র হতে শুরু করে। তবে ২০২১ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইসের হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নেয় এবং দেশটি গভীর রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে পতিত হয়। রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণে। সম্প্রতি এই সহিংসতা দেশের অন্যান্য অংশেও, বিশেষ করে আর্টিবোনাইট ও মধ্যাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে।

জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত হাইতিতে গ্যাং সহিংসতায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, সহিংসতায় দেশজুড়ে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অগণিত মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের হিসাবমতে, গত অক্টোবর থেকে জুনের মধ্যে শুধু আর্টিবোনাইট ও মধ্যাঞ্চলেই এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ৬২০ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। গত এপ্রিল মাসের শেষে গ্যাংয়ের হাত থেকে বাঁচতে বহু মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর্টিবোনাইট নদী পাড়ি দিয়ে পালাতে দেখা যায়।

এই চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি জাতিসংঘ-সমর্থিত কেনিয়ার নেতৃত্বে একটি বহুজাতিক পুলিশ মিশন হাইতিতে মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যেই শুক্রবার হাইতির পুলিশ বাহিনীর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আন্দ্রে জোনাস ভ্লাদিমির প্যারেসন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘পুলিশ ঘুমাবে না। দেশের প্রতিটি কোণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’

এদিকে, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ব্যবসায়ী লরেন্ট সেন্ট-সাইর এই সপ্তাহে হাইতির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এই কাউন্সিলের প্রধান লক্ষ্য হলো ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। তবে গ্যাং নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া সেই লক্ষ্য অর্জন কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে গভীর সংশয় রয়ে গেছে।