ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে অধিকাংশ জার্মান, ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানিতে আংশিক স্থগিতাদেশ

জার্মান সরকারের বর্তমান নীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে দেশটির অধিকাংশ নাগরিক একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। রবিবার বার্লিনভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনালে পলিটিক’ কর্তৃক প্রকাশিত এক জনমত জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৫৪ শতাংশ জার্মান নাগরিক ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে, ৩১ শতাংশ নাগরিক এর বিরোধিতা করেছেন। তরুণ জার্মান এবং কট্টর বামপন্থী বিরোধী দল ‘দ্য লেফট পার্টি’-র সমর্থকদের মধ্যে এই স্বীকৃতির পক্ষে জোরালো সমর্থন লক্ষ্য করা গেছে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ‘দ্য লেফট পার্টি’-র সমর্থকদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির পক্ষে মত দিয়েছেন। বিরোধী দল ‘গ্রিন পার্টি’-র সমর্থকদের মধ্যে এই হার ৬৬ শতাংশ এবং জোট সরকারের শরিক দল ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’ (এসপিডি)-র সমর্থকদের মধ্যে ৫২ শতাংশ। তবে, জোট সরকারের আরেক শরিক ‘ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন/ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন’-এর সমর্থকদের মধ্যে এই হার ছিল ৪৮ শতাংশ এবং কট্টর ডানপন্থী বিরোধী দল ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি’ (এএফডি)-র সমর্থকদের মধ্যে ছিল ৪৫ শতাংশ, যা তুলনামূলকভাবে কম।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত আরেকটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে দেশটির ওপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অধিকাংশ জার্মান নাগরিক। সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ‘এআরডি’-র জন্য পরিচালিত ‘ডয়েচল্যান্ডট্রেন্ড’ শীর্ষক ওই জরিপে ৬৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী একমত হয়েছেন যে, ‘ইসরায়েলি সরকারকে তার অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য করতে জার্মান সরকারের আরও চাপ প্রয়োগ করা উচিত’। মাত্র ২৪ শতাংশ এই অবস্থানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জোট সরকারের শরিক দল এসপিডি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি প্রস্তাবনা তৈরির কাজ করছে। এসপিডি সংসদীয় দলের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক মুখপাত্র আদিস আহমেতোভিচকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘এসপিডি হিসেবে আমরা সাম্প্রতিক দলীয় কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রক্রিয়ায় স্বীকৃতিই শেষ কথা হতে হবে এমন নয়’। তিনি আরও বলেন, ‘ফ্রান্স, গ্রেট ব্রিটেন এবং কানাডার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণাকে আমরা সম্পূর্ণভাবে অনুধাবন করি। এটি তাদের পররাষ্ট্রনীতির একটি যৌক্তিক পরবর্তী পদক্ষেপ’।

ক্রমবর্ধমান জনচাপ, বিশেষ করে গাজায় শিশুদের অনাহারে মৃত্যুর বিভিন্ন প্রতিবেদন সামনে আসার পর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন কর্তৃক অনুসৃত নীতির বিপরীতে গিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস শুক্রবার ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানিতে আংশিক স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেছেন।

এক বিবৃতিতে এই রক্ষণশীল নেতা বলেন, ইসরায়েলি সরকারের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ ও গাজা শহর দখলের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায়, জার্মান সরকার এমন কোনো সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির অনুমোদন দেবে না যা গাজা ভূখণ্ডে ব্যবহার করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, বিগত কয়েক মাস ধরে চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের জন্য বিরোধী আইনপ্রণেতাদের আহ্বান এবং তেল আবিবের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন। অথচ এই সময়ে গাজায় ইসরায়েলের চালানো নৃশংস সামরিক অভিযান ও অবরোধের ফলে ৬১,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি হতাহতের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু।