গাজা প্রশ্নে চার বিশ্বশক্তির তীব্র বিরোধিতা, আন্তর্জাতিক চাপে ইসরায়েল

গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল করার ইসরায়েলি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের চারটি দেশ। রবিবার অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এই পরিকল্পনার ঘোর বিরোধিতা করলেও যুক্তরাষ্ট্র বরাবরের মতোই ইসরায়েলের পাশেই দাঁড়িয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাবিত গাজা দখল এবং ফিলিস্তিনিদের উত্তর থেকে দক্ষিণে বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনাটি দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ার পরই এই জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়।

বৈঠকে জাতিসংঘের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি রাশিয়ার কঠোর অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের স্থূল লঙ্ঘন’ এবং ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানের প্রতি নির্লজ্জ উপেক্ষা’ বলে অভিহিত করেন। রাশিয়া ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সারের বিরুদ্ধে ভণ্ডামির অভিযোগ তুলে বলেছে, গত মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদে জিম্মিদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তিনি মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলেন।

চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ফু কং ইসরায়েলকে ‘অবিলম্বে এই বিপজ্জনক পদক্ষেপ বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গাজা ফিলিস্তিনি জনগণের। এটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এর জনসংখ্যাগত এবং ভূখণ্ডগত কাঠামো পরিবর্তনের যেকোনো প্রচেষ্টাকে অবশ্যই সর্বোচ্চ প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হবে।’ চীন ‘সামরিক আধিপত্যের মোহ’ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানায় এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে সীমান্ত পারাপার খুলে দিয়ে ত্রাণ সহায়তার ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার দাবি জানায়।

ফ্রান্স: ইসরায়েলের নিরাপত্তায় কোনো ভূমিকা রাখবে না

যুক্তরাজ্যের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি জেমস কারিউক ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ এই সংঘাতের অবসান ঘটাবে না। এটি জিম্মিদের মুক্তিও নিশ্চিত করবে না।’ তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা সংকট সমাধানের পথ নয়, বরং এটি ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ আরও গভীর করবে এবং রক্তপাত বাড়াবে।

ফ্রান্সের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি জে ধর্মধিকারী ইসরায়েলকে সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘গাজা উপত্যকা দখল, অঙ্গীভূতকরণ এবং বসতি স্থাপনের যেকোনো পরিকল্পনার প্রতি ফ্রান্সের দৃঢ় বিরোধিতা রয়েছে।’ তার মতে, ‘ইসরায়েলি সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কোনোভাবেই ইসরায়েল এবং তার নাগরিকদের নিরাপত্তায় অবদান রাখবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত

বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রতিনিধি ডরোথি শেয়া ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকারের’ পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। তিনি এই অঞ্চলের সমস্যার জন্য হামাসের ‘অনমনীয়তাকে’ দায়ী করে বলেন, গোষ্ঠীটি ‘যুদ্ধবিরতি মানতে অস্বীকার করছে’।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজাকে পুরোপুরি দখল এবং ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার জন্য নেতানিয়াহুর ‘ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা’ অনুমোদন করে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চালানো প্রাণঘাতী যুদ্ধে ৬১,০০০-এর বেশি মানুষকে হত্যার ঘটনায় ইসরায়েল ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক ক্ষোভের মুখে পড়েছে। এই সামরিক অভিযানে সমগ্র উপত্যকা বিধ্বস্ত হয়েছে এবং দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে একটি মামলা চলমান রয়েছে।