আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সেই মতিউর, হাতজোড় করে চাইলেন জামিন

‘আমার সংসার তছনছ হয়ে গেছে’ — আদালতের কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়লেন এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান। মুখে লম্বা দাড়ি, মাস্ক দিয়ে ঢাকা মুখ; একসময়ের ক্ষমতাধর এই কর্মকর্তার চোখেমুখে ছিল অসহায়ত্বের ছাপ। মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন শুনানির সময় তিনি এভাবেই নিজের পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

এদিন আদালতে মতিউর রহমান নিজেই কথা বলার অনুমতি চান। বিচারক অনুমতি দিলে তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমাকে যেদিন গ্রেপ্তার করা হয়, সেদিন আমার পিতা মারা যান। পরে আমার মা স্ট্রোক করেন।’ দুই হাত জোড় করে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি আর কিছুই চাচ্ছি না। আমাকে যে শাস্তি দেবেন, আমি সেই শাস্তি মেনে নেব।’

মতিউর দাবি করেন, কাস্টমসে চাকরির সময় একজন সামরিক কর্মকর্তার রোষানলে পড়ে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন এবং কীভাবে তাকে ফাঁসানো হয়েছে, তা উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিটি তিনি আদালতেও জমা দেন।

তবে মতিউরের আবেগঘন বক্তব্যের জবাবে আদালত কঠোর অবস্থান নেন। বিচারক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে সিরিজ অব করাপশনের (একের পর এক দুর্নীতি) অভিযোগ রয়েছে। সত্য জানার জন্য একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে সময় লাগবে। সেই সময় পর্যন্ত আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে।’ আদালত আরও যোগ করেন, ‘দুদকের জালে এখন হাজার মতিউর।’

আদালতের এই পর্যবেক্ষণের পর মতিউর রহমান ও তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের জামিন আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়।

গত বছরের কোরবানির ঈদের ঠিক আগে মতিউরের ছেলে মুশফিকুর রহমানের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপরই মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে। এই ছাগলকাণ্ডের সূত্র ধরেই আলোচনায় আসেন এনবিআরের এই সাবেক সদস্য। তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে থাকা রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলোবাড়ি ও অঢেল জমির তথ্য ফাঁস হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৫ জানুয়ারি মতিউর ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুদক চারটি এবং পুলিশ অস্ত্র আইনে একটিসহ মোট পাঁচটি মামলা করেছে। কেবল এই একটি মামলাতেই মতিউরের বিরুদ্ধে ৫৩ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুদক।

মতিউরের পরিবার কার্যত ছত্রভঙ্গ। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলী (ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মুশফিকুরের মা) এবং মুশফিকুর রহমান দুজনেই বিদেশে পালিয়ে আছেন। প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের ছেলে ও মেয়েও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, যাঁদের মধ্যে মেয়ে কানাডায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার আদালতের কার্যক্রম শেষে মতিউরকে কিশোরগঞ্জ কারাগার এবং তার স্ত্রী লায়লা কানিজকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলার শুনানির দিনেই কেবল কারাগারে থাকা এই দম্পতির দেখা হয় আদালত কক্ষে।