গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল, তীব্র ক্ষোভ সাবেক বিশ্বনেতাদের
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন এবং নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক তীব্র অভিযোগ তুলে বলেছেন, ইসরায়েল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা প্রবেশে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে।

‘দ্য এল্ডার্স’ নামক বিশ্বনেতাদের একটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে তারা গত সপ্তাহে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ের মিশরীয় অংশ পরিদর্শন করেন। ফিলিস্তিনি অংশের টার্মিনাল ইসরায়েল বন্ধ করে দেওয়ায় সীমান্তে আটকে থাকা ত্রাণবাহী ট্রাকের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাই ছিল তাদের এই সফরের উদ্দেশ্য।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তারা জানান, সামান্য কিছু খাদ্য প্রবেশ করতে পারলেও জেনারেটর, হুইলচেয়ার, ক্রাচ, অক্সিজেনের সিলিন্ডার, তাঁবু এবং শিশুদের বইয়ের মতো জীবন রক্ষাকারী বিপুল পরিমাণ অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী এখনও সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
মেরি রবিনসন বলেন, ‘আমরা গুদামে দেখেছি তাঁবুগুলো সরবরাহ করা হয়নি, জেনারেটর সরবরাহ করা হয়নি, হুইলচেয়ার, ক্রাচ, শিশুদের বই এবং আরও অনেক কিছুই সরবরাহ করা হচ্ছে না। সামান্য কিছু খাবার ভেতরে যাচ্ছে। ছোটখাটো সমস্যার কারণে একজন চালককে দ্বিতীয়বারের মতো ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অক্সিজেনের সিলিন্ডার, জেনারেটর, হুইলচেয়ার, ক্রাচের মতো অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী এভাবে পড়ে থাকতে দেখাটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। এটা অবিশ্বাস্য।’
হেলেন ক্লার্ক জানান, মাঠের বাস্তব পরিস্থিতি দেখতেই তারা রাফাহ পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য চরম বেদনাদায়ক। এরপর আবার প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ পুরো ট্রাক ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য থাকা সত্ত্বেও একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ট্রাককে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।’ তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘এটা অবশ্যই বন্ধ হতে হবে।’
‘ক্ষুধায় মরছে মানুষ’
সাবেক এই দুই বিশ্বনেতা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় бесশর্তে ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার জন্য একটি যৌথ আবেদন জানিয়েছেন।
রবিনসন বলেন, ‘অবশ্যই যুদ্ধবিরতি হতে হবে এবং ত্রাণ প্রবেশের সব পথ খুলে দিতে হবে। মানুষ ক্ষুধায় কাতর, শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগে মারা যাচ্ছে। আমরা একটি চলমান দুর্ভিক্ষ ও গণহত্যা প্রত্যক্ষ করছি এবং এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
ইসরায়েল গাজায় প্রায় ২৪ লক্ষ ফিলিস্তিনির ওপর পরিকল্পিতভাবে খাদ্যাভাব চাপিয়ে দেওয়ার নীতি অব্যাহত রেখেছে। গত ২ মার্চ থেকে ত্রাণ সরবরাহের সমস্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ায় উপত্যকাটি দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। গাজার জনসংখ্যার ন্যূনতম মানবিক চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক এবং ৫০টি জ্বালানি ট্রাকের প্রয়োজন।
এক যৌথ বিবৃতিতে রবিনসন ও ক্লার্ক বলেন, ‘গাজায় জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা প্রবেশে ইসরায়েলের ইচ্ছাকৃত বাধার কারণে ব্যাপক হারে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ায় আজ আমরা আমাদের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি।’
তারা আরও বলেন, ‘আমরা যা দেখেছি ও শুনেছি, তা আমাদের ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে যে গাজায় কেবল মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষই ঘটছে না, সেখানে একটি চলমান গণহত্যাও সংঘটিত হচ্ছে। আমরা দেখেছি খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী প্রবেশে বাধা দেওয়ার প্রমাণ এবং গাজার অভ্যন্তরে ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক, এমনকি শিশুদের হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণ শুনেছি। গাজায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করে দেওয়ায় তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শুধু জুলাই মাসেই অন্তত ৩৬টি শিশু অনাহারে মারা গেছে।’
তাঁরা মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য গাজার ক্রসিংগুলো অবিলম্বে খুলে দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই বছরের মার্চ মাস থেকে গাজায় কোনো আশ্রয়সামগ্রী প্রবেশ করতে পারেনি, অথচ আমরা দেখেছি বিপুল সংখ্যক তাঁবু বিতরণের জন্য প্রস্তুত থাকলেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তা আটকে দিয়েছে। এর ফলে বারবার বাস্তুচ্যুত হওয়া পরিবারগুলো সুরক্ষা ছাড়াই দিন কাটাচ্ছে। ছিয়ানব্বই শতাংশ পরিবার পানি সংকটের মুখোমুখি।’
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় এক নৃশংস আগ্রাসন চালিয়ে আসছে, যেখানে ৬১,৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত নভেম্বরে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, উপত্যকায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.