কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিকে বিদ্রূপ, ইসরায়েলি মন্ত্রীর ভিডিও ঘিরে তোলপাড়

সম্প্রতি আরব ও ফিলিস্তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ভিডিওটিতে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভিরকে কারাগারে প্রবেশ করে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দী মারওয়ান আল-বারঘুতিকে হুমকি ও বিদ্রূপ করতে দেখা গেছে। তোলো নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিকভাবে মারওয়ান আল-বারঘুতি ‘ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেলা’ এবং ‘বন্দিদের ডিন’ হিসেবে পরিচিত। গত ২৩ বছর ধরে বন্দী থাকলেও তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।

আরব গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা গেছে, বেন গভির কারাবন্দী আল-বারঘুতিকে বলেন, ‘তুমি জিততে পারবে না। যারা ইসরায়েল রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং আমাদের শিশু ও নারীদের হত্যা করে, আমরা তাদের নির্মূল করব। ইতিহাসজুড়ে এমনটিই হয়েছে, তা তোমার জানা উচিত।’

এই ভিডিও প্রকাশের পর মারওয়ান আল-বারঘুতির শারীরিক অবস্থা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ইসরায়েলের রামন কারাগারে বন্দী থাকা ৬৭ বছর বয়সী এই নেতার স্বাস্থ্য আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

বারঘুতির স্ত্রী, ফিলিস্তিনি আইনজীবী ফাদওয়া বারঘুতি বলেন, ‘ভিডিও দেখে আমি আমার স্বামীর চেহারাও চিনতে পারিনি। তার স্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে এবং তিনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছেন।’

ভিডিওটি প্রকাশের পর বহু মানবাধিকার সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলের এই আচরণকে অমানবিক ও রাজনৈতিক দমনপীড়নের অংশ হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা মারওয়ান আল-বারঘুতির মুক্তির জন্য আবারও আহ্বান জানিয়েছে।

কে এই মারওয়ান

১৯৫৮ সালের ৬ জুন রামাল্লার উত্তর-পশ্চিমে কোবার গ্রামে জন্ম নেওয়া মারওয়ান অল্প বয়সেই ফাতাহ আন্দোলনে যোগ দেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ফিলিস্তিনি মুক্তি সংগ্রামে যুক্ত হন এবং ১৮ বছর বয়সে প্রথমবার ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি হিব্রু ভাষা শেখেন।

পরবর্তী সময়ে তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার, জিজ্ঞাসাবাদ ও গৃহবন্দিত্বের শিকার হন। ১৯৮৭ সালের প্রথম ইন্তিফাদার (গণ-অভ্যুত্থান) অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। এরপর তাকে জর্ডানে নির্বাসিত করা হয়, যেখানে তিনি সাত বছর কাটান। ১৯৯৪ সালে অসলো চুক্তির মাধ্যমে পশ্চিম তীরে ফিরে আসেন এবং ১৯৯৬ সালে ফিলিস্তিনি আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল রামাল্লার নিজ বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি বাহিনী। একই বছর ইসরায়েল তাকে আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী গঠনের অভিযোগে কারাদণ্ড দেয়, যদিও আল-বারঘুতি সেই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছেন।

প্রায় ২৩ বছর ধরে মারওয়ান আল-বারঘুতি ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী। তিনি ফিলিস্তিনের সবচেয়ে প্রবীণ ও সুপরিচিত বন্দিদের একজন এবং নেলসন ম্যান্ডেলার মতোই বিশ্বব্যাপী সংগ্রামের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।