ঐক্যের ডাক দিলেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ

দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সিরিয়াকে রক্তপাত বা সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নয়, বরং সমঝোতার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করার ওপর জোর দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। একইসঙ্গে তিনি দেশ বিভাজনের দাবি পুরোপুরি নাকচ করে দিয়ে দক্ষিণ সিরিয়ায় ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছেন। আরব নিউজের বরাত দিয়ে এ খবর জানানো হয়েছে।

রোববার (১৭ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট শারা এসব মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ইদলিবসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘সিরিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমাদের সামনে আরও একটি লড়াই বাকি। তবে তা রক্তপাত ও সামরিক শক্তির মাধ্যমে হওয়া উচিত নয়। এটি হতে হবে এক ধরনের সমঝোতার মাধ্যমে, কারণ সিরিয়া যুদ্ধে ক্লান্ত।’

দেশকে বিভক্ত করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘সিরিয়াকে বিভক্ত করার কোনো আশঙ্কা আমি দেখি না। কিছু লোক সিরিয়াকে বিভক্ত করে ক্যান্টন (স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে... এটি অসম্ভব।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘কিছু গোষ্ঠী আঞ্চলিক শক্তি, ইসরায়েল বা অন্য কারও মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চায়। এটিও অত্যন্ত কঠিন এবং বাস্তবায়নযোগ্য নয়।’

প্রেসিডেন্ট শারার এ বক্তব্য এমন সময় এলো, যখন সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুইদা প্রদেশে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। গত মাসে সেখানে দ্রুজ ও সুন্নি বেদুইনদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী অনেকেই স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানান এবং কয়েকজনকে ইসরায়েলি পতাকাও ওড়াতে দেখা যায়।

গত ১৩ জুলাই দ্রুজ যোদ্ধা ও সুন্নি বেদুইনদের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে সুইদায় এক সপ্তাহের রক্তক্ষয়ী সহিংসতা শুরু হয়, যা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। এই সংঘাতে সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি ইসরায়েলও বিমান হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

সিরিয়ার কর্তৃপক্ষের দাবি, সংঘর্ষ থামাতে তাদের বাহিনী হস্তক্ষেপ করেছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শী, দ্রুজ গোষ্ঠী ও সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বেদুইনদের পক্ষ নেওয়ার এবং দ্রুজদের ওপর নির্যাতন, এমনকি বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ তুলেছে।

এ প্রসঙ্গে শারা বলেন, ‘সুইদায় সব পক্ষের দ্বারাই নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্যও এতে জড়িত ছিল। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো সব লঙ্ঘনকারীকে তাদের সম্পৃক্ততা নির্বিশেষে জবাবদিহির আওতায় আনা।’

তিনি সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘ইসরায়েল সরাসরি সুইদায় হস্তক্ষেপ করছে। তারা রাষ্ট্রকে দুর্বল করার এবং দক্ষিণাঞ্চলে হস্তক্ষেপের অজুহাত তৈরির চেষ্টা করছে।’ অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা সংখ্যালঘু দ্রুজ গোষ্ঠীকে রক্ষা এবং দক্ষিণ সিরিয়াকে অস্ত্রমুক্ত রাখার লক্ষ্যেই কাজ করছে।

উল্লেখ্য, গত মার্চে সিরিয়ার উত্তর ও উত্তর-পূর্বে কার্যত স্বাধীনভাবে পরিচালিত কুর্দি প্রশাসনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে প্রশাসনিক ও সামরিক কাঠামোকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সঙ্গে একীভূত করা নিয়ে মতবিরোধ থাকায় চুক্তির বাস্তবায়ন আটকে আছে। এ বিষয়ে শারা বলেন, ‘আমরা এখন চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছি।’