নতুন সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদ নির্বাচন চায় এনসিপি

ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তগুলোর টেকসই বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন একটি সংবিধান প্রণয়নের দাবি তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি মনে করে, জুলাই সনদের অঙ্গীকারগুলো যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তাতে এর বাস্তবায়নের ভার পরবর্তী সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা একে স্থায়ীত্ব দেবে না।

শনিবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এসব কথা বলেন। তিনি জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের পর জনগণের বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে রাষ্ট্র কাঠামো পরিচালনার জন্য যে বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলোর স্থায়ী রূপ দিতে নতুন সংবিধান অপরিহার্য।

আখতার হোসেন বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, সংবিধান সংশোধন, উচ্চকক্ষ, নারী প্রতিনিধিত্ব, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও নির্বাচন, ক্ষমা প্রদর্শনের বিধান, এবং বিচারক নিয়োগের মতো প্রতিটি বিষয় সরাসরি সংবিধানের সঙ্গে জড়িত।’ তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সংবিধানে এসব পরিবর্তন আনতে হলে ৬০ থেকে ৭০টির বেশি জায়গায় সংশোধন করতে হবে, যা কার্যত একটি নতুন সংবিধান লেখার সমান। তার মতে, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই নতুন সংবিধানের রূপরেখা তৈরি করবেন।

‘জুলাই সনদ’-এর খসড়া নিয়েও আপত্তি তুলেছে এনসিপি। আখতার হোসেন বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর নাম ‘জুলাই সনদ’ রাখার কথা থাকলেও এটিকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, যা জুলাই আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অবদানকে দুর্বলভাবে উপস্থাপন করে।’ এছাড়া, এই সনদের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা এখনো অস্পষ্ট বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কমিশনের বৈঠকে বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে আনা একই ধরনের পরিবর্তন অতীতে টেকসই হয়নি। তাই এমন একটি নতুন সংবিধান প্রয়োজন, যার ভিত্তি নিয়ে ভবিষ্যতে উচ্চ আদালতে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না।’

জুলাই সনদের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে দেশের সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ যেন আর কখনো ফ্যাসিবাদের দিকে না যায় এবং পূর্ববর্তী সরকারের রেখে যাওয়া সাংবিধানিক উপাদান যেন ফিরে আসতে না পারে, সেই লক্ষ্যে সবাইকে এক হতে হবে।’

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (মিডিয়া) মুশফিক উস সালেহীনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সদস্যসচিব সাঈদ মোস্তাফিজ, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন এবং জয়নাল আবেদীন শিশিরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।