কয়েক দশক ধরে যুদ্ধ চালানোর পরিকল্পনা ছিল ইসরায়েলের, সব জানত ওয়াশিংটন
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার টেবিলে থাকলেও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল ইসরায়েলের এবং বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াশিংটন পুরোপুরি অবগত ছিল। বাইডেন প্রশাসনে আলোচনায় অংশ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই তথ্য প্রকাশ করেছেন।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের চ্যানেল থার্টিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, যুদ্ধের শুরুতেই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভাকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে, গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা না থাকলে দেশটিকে এক অন্তহীন বিদ্রোহের ঝুঁকিতে পড়তে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন। আমরা আগামী কয়েক দশক ধরে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাব। এভাবেই চলে আসছে এবং এভাবেই চলতে থাকবে।’
চ্যানেল থার্টিনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নেতানিয়াহু, জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ অন্তত পাঁচবার হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি আটকে দিয়েছিলেন।
মিলার এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ওয়াশিংটন জানত যে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছিল, কিন্তু তারপরেও তারা চুপ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের তেমন কোনো ক্ষমতা ছিল না। অনেক সময় তা শূন্যের কোঠায় ছিল।’ তিনি উল্লেখ করেন, পরিস্থিতি প্রায়ই হঠাৎ করে বদলে যেত, এমনকি মার্কিন দূতেরা যখন বিমানে উঠছেন, তখনও এমন ঘটনা ঘটত।
২০২৪ সালের এপ্রিলে রাফায় ইসরায়েলি আগ্রাসন এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র যখন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীটিকে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর চেষ্টা করছিল, তখন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, ‘যুদ্ধবিরতি হোক বা না হোক’, রাফায় হামলা হবেই।
চুক্তিতে আটকে রাখার কৌশল
২০২৪ সালের মে মাসে নেতানিয়াহু একটি চুক্তিতে সম্মতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জিম্মি চুক্তির শর্তগুলো প্রকাশ করে দেন, যাতে প্রধানমন্ত্রী সেই অবস্থান থেকে পিছু হটতে না পারেন।
মিলার ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমরা ইসরায়েল সরকারকে প্রেসিডেন্টের ভাষণের মাত্র এক বা দুই ঘণ্টা আগে জানিয়েছিলাম। কারণ সত্যি বলতে, আমরা গত কয়েক মাস ধরে দেখেছি ইসরায়েলি সরকার বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা বানচাল করার চেষ্টা করেছে। আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম যে এবার তেমনটা হতে দেবো না।’ তার মতে, উদ্দেশ্য ছিল ‘প্রধানমন্ত্রীকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আটকে ফেলা, যাতে তার পক্ষে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে।’
মিলার আরও বলেন, ‘অনেক সময় আমরা প্রকাশ্যে বলতে চেয়েছিলাম যে, প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ একগুঁয়ে আচরণ করছেন এবং চুক্তি করা কঠিন করে তুলছেন। কিন্তু আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে এতে কোনো লাভ হবে না। আমরা বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে মনে করলে (হামাসের সাবেক নেতা ইয়াহিয়া) সিনওয়ার আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াতেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পর্দার আড়ালে ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে কঠোরভাবে কথা বলতে চেয়েছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এমন কিছু করতে চাইনি যা চুক্তি অর্জনকে আরও কঠিন করে তুলবে।’
মিলার উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে হামাস যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় করা একটি প্রস্তাব মেনে নিলেও ইসরায়েল প্রায় এক মাস ধরে সময়ক্ষেপণ করে। কারণ নেতানিয়াহু গাজার মিশর সীমান্তে সেনা মোতায়েন রাখার বিষয়ে জোর দিচ্ছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা এটিকে সবচেয়ে ক্ষতিকর মোড় হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা একটি চুক্তির সম্ভাবনাকে লাইনচ্যুত করে।
মিলার বলেন, ‘এটি গত কয়েক মাস ধরে দেখা আসা ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারা (ইসরায়েলিরা) সব সময় শর্ত যোগ করার বা আলোচনার শর্তাবলি আরও কঠিন করার উপায় খুঁজত। সম্ভবত এটিই ছিল সবচেয়ে হতাশাজনক ঘটনা, কারণ আমরা এমন একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি ছিলাম যা জিম্মিদের বাড়ি ফিরিয়ে আনতে পারত এবং হয়তো চিরতরে যুদ্ধ শেষ করতে পারত।’
চ্যানেল থার্টিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের শেষের দিকে নেতানিয়াহু ইসরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের একটি যুগান্তকারী প্রস্তাব একপাশে সরিয়ে রেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.