টানা ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ? বাফুফের নতুন গঠনতন্ত্রে লাগাম টানার প্রস্তাব

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাহী কমিটিতে এখন থেকে কেউ টানা বা বিচ্ছিন্নভাবে তিন মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। সভাপতি থেকে শুরু করে সদস্য পর্যন্ত সব পদের জন্যই এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। ২৬ অক্টোবর নির্বাচনে জয়ের পর তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিটির সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া গঠনতন্ত্রের খসড়ায় এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।

গত শনিবার বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপিত এই খসড়া অনুযায়ী, শুধু মেয়াদের সীমা নয়, নির্বাচন প্রক্রিয়াও আগের চেয়ে বেশ কঠিন হচ্ছে। এখন থেকে সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে জিততে হলে একজন প্রার্থীকে মোট ভোটের অন্তত ৫০ শতাংশ পেতে হবে। কোনো প্রার্থী প্রয়োজনীয় ভোট না পেলে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুইজনের মধ্যে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সদস্য পদের জন্য সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতাই যথেষ্ট হবে।

প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়মে পরিবর্তন আসছে। সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদের জন্য এখনকার মতো দুজন নয়, কমপক্ষে পাঁচজন সমর্থক বা প্রস্তাবক লাগবে। তবে সদস্য পদের জন্য দুজনের সমর্থনই বহাল থাকছে। অন্যদিকে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ২৫ থেকে ৭২ বছরের যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা তুলে দেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে যেকোনো বয়সের প্রার্থীই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

খসড়া অনুযায়ী, বাফুফের বিচারিক ও নির্বাচন সংক্রান্ত কমিটিগুলোকে নির্বাহী কমিটির প্রভাবমুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিসিপ্লিনারি, আপিল, নির্বাচন কমিশন এবং অডিট ও কমপ্লায়েন্স কমিটি আর মনোনীত হবে না, বরং কংগ্রেসের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে। গঠনতন্ত্র পাস হওয়ার এক বছরের মধ্যে এই কমিটিগুলোর নির্বাচন শেষ করতে হবে। এসব কমিটিতে নির্বাহী কমিটির সদস্য, কর্মকর্তা এমনকি তাদের আত্মীয় বা ব্যবসায়িক অংশীদাররাও থাকতে পারবেন না।

নির্বাহী কমিটির কাঠামো আগের মতোই ২১ সদস্যের থাকছে, যেখানে একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি, চারজন সহ-সভাপতি ও ১৫ জন সদস্য থাকবেন। তবে নতুন সংযোজন হিসেবে ১৫ জন সদস্যের মধ্যে কমপক্ষে দুজন নারী সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ভোটাধিকারের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে ডেলিগেট তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যদিও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন থাকছে। আগে বাফুফের অধিভুক্ত সব বিশ্ববিদ্যালয় ভোটাধিকার পেলেও এখন শুধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতার শীর্ষ তিন দল ভোট দিতে পারবে। ফুটবলের অন্যতম ভিত্তি পাইওনিয়ার লিগের ক্লাবগুলোকে সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও তাদের ভোটাধিকারের প্রস্তাব করা হয়নি।

নতুন গঠনতন্ত্র পাস হলে পরবর্তী নির্বাচন থেকেই মেয়াদের গণনা শুরু হবে। ফলে বর্তমান কমিটির যারা তিন বা তার বেশি মেয়াদ পার করেছেন, তারাও পুনরায় নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন। ড. মোহাম্মদ জাকারিয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি এই খসড়াটি তৈরি করেছে। এখন নির্বাহী কমিটির সদস্যরা এটি পর্যালোচনা করে মতামত দেবেন এবং ক্লাব ও জেলাগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সাধারণ সভায় (এজিএম) উপস্থাপন করা হবে।